TMC: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনা কি ফাটল ধরিয়েছে শাসক দলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কে? রাতের শহরে খোদ কলকাতায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে যখন বড়সড় প্রশ্ন উঠছে একইসময় মহিলা ভোট নিয়েও চিন্তায় শাসক দল। গত কয়েকমাসে লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল(TMC) বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। তার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল মহিলাদের সমর্থন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বা কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পকে যতই বিরোধী দলগুলি ‘ভাতা’ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করুক, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় আদতে সেই প্রচারই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধী দলগুলির কাছে। এমনকি ভোটে হারের পর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি রাজ্য কমিটিকে দেওয়া বার্তায় পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বা কন্যাশ্রী প্রকল্পগুলিকে সিপিএম যেভাবে ভাতা বলে প্রচার করেছে তার নেতিবাচক ফল পড়েছে ভোটবাক্সতে। গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ যে সেই প্রকল্পগুলির ফলে উপকৃত হয়েছেন তা অস্বীকারের কোন উপায় নেই। তবে আর জি কর(RG Kar) হাসপাতালে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র রাজ্যের মহিলারা যেভাবে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তাতে বামেদের মনে ফের আশার সঞ্চার হয়েছে। বামেদের দাবি আর জি করের ঘটনা রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শহর কলকাতা তো বটেই গ্রামের মানুষও এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব প্রতিবাদে সামনের সারিতে রয়েছেন মহিলারা। আর সে কারণেই বাম নেতৃত্ব মনে করছে তৃণমূল(TMC) এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর কন্যাশ্রী প্রকল্পের গুণগান করে মহিলা ভোটকে ধরে রাখতে পারবে না। কারণ মহিলারা বুঝতে পারছেন রাজ্যে তারা নিরাপদ নন। এর ফলে শাসক দলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কে এবার ফাটল ধরতে বাধ্য।
বিগত বেশকিছু নির্বাচনে দেখা গেছে গ্রামাঞ্চলের একটা বড় অংশের মহিলা ভোট গেছে তৃণমূলের(TMC) ঝুলিতে। চাকরি, রেশন সহ বহুক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীরা লাগাতার প্রচার করলেও শাসকদলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো যায়নি। কিন্তু আর জি কর(RG Kar) হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় রাজ্যের মহিলারা ক্ষুব্ধ। কিছুদিন আগেই গোটা রাজ্যজুড়ে আয়োজিত হয়েছে মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতেও অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। কর্মসূচিটি কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত না হলেও মহিলারা যেভাবে শাসক দলের বিরুদ্ধে পথে নেমে সরব হয়েছেন তাতে আশায় বুক বাঁধছে সিপিএম। এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেত্রী কনীনিকা ঘোষ বলেন, ‘ আমরা শুধু ভোটের অঙ্ক মাথায় রাখতে চায় না। আসলে রাজ্যে ঘটে চলা একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট এখানে নারী নিরাপত্তা শিকেয়। মহিলারা তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অত্যাচারের বিচার পাচ্ছেন না। সেকারনেই তারা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। আমরা এই আন্দোলনে মহিলা এবং শ্রমজীবী মানুষকে আরও বেশি করে চাই। এবার তাদের অধিকার বুঝে নেওয়ার পালা।’
লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম দীপ্সিতা ধর, সোনামনি টুডুর মতো বেশকিছু নতুন মুখকে লড়াইয়ের ময়দানে এনেছিল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভোটে জিতলে বাজেটের একটা বড় অংশ বরাদ্দ করা হবে মহিলাদের জন্য। কিন্তু তারপরেও ভোটে হারতে হয়েছে। এই অবস্থায় আর জি করের ঘটনাকে হাতিয়ার করেই হালে পানি পেতে চাইছে বাম নেতৃত্ব।