রাজীব ঘোষ: মাওবাদী নেতা অর্ণব দামকে পিএইচডি(Ph.D)করতে দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শিলদা ইএফ আর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম(Arnab Dam)।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ একটি টুইটে লেখেন, মাওবাদী নেতা জেলবন্দী অর্ণব দামকে Ph.D করতে দিতে হবে। কারণ সে যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রী এবং কারামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ওনাকে সহযোগিতা করবেন। হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে অর্ণবকে সরানো হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ আন্তরিক। তবে অকারনে উপাচার্য জট তৈরি করে এই বিষয়টিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কার্যত এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা কুণাল সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্রের উপরে। সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়া মাওনেতা অর্ণব দামের সেই প্রচেষ্টার পথে বাধা তৈরি হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরি এই সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। কুণালের দাবি যদি সঠিক হয়, তাহলে অর্ণবকে শীঘ্রই চুঁচুড়া জেল থেকে নিয়ে বর্ধমান জেলে স্থানান্তরিত করা হবে। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের পদ্ধতি মেনেই আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও রাজ্য সরকার বদল আনতে চাইছে।
সংবাদ মাধ্যমকে কুণাল বলেন, শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু আর কারা মন্ত্রী অখিল গিরি অর্ণবের বিষয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভির নাসরিন এবং হুগলী জেলের সুপার দেবাশীষ বণিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সকলেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু উপাচার্যই সমস্ত সমস্যা তৈরি করে জট পাকিয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি আন্দোলনে নেমেছে। উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠনও উপাচার্যের বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, উপাচার্য উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে চলছেন। অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে পুলিশ তার সঙ্গে যাবে কিনা, তিনি কিভাবে যাওয়া আসা করবেন, সেই সমস্ত কিছু তুলে বিষয়টিকে জটিল করছেন উপাচার্য, এমনটাই অভিযোগ কুণালের।
আরও পড়ুনঃ ফের নারী অধিকারের কথা স্মরণ করাল শীর্ষ আদালত, গৃহবধূদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত
শিলদা EFR ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম হুগলির চুঁচুড়া জেলে বন্দী থাকা অবস্থাতেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে পিএইচডি করতে যেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদন গৃহীত হওয়ার পর পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষায় অর্ণব বসেছিলেন। ২৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অর্ণব দাম সেই পরীক্ষায় প্রথম হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৯ তারিখ ছিল তার ভর্তির দিন। শুধু তার নয়, সেদিন আরো অনেকেরই ভর্তির দিন নির্ধারিত ছিল। আর তার ঠিক আগের দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (Burdwan University Authority) বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ইতিহাসের পিএইচডির জন্য Merit Based Counseling হচ্ছে না। কারনটা কি? সেখানে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, Unavoidable Circumstances।
আর এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেই জোরদার বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং অখিল গিরি অর্ণবের ভর্তির পথে সমস্ত বাধা দূর করতে ময়দানে নেমেছেন। আর এর ফলে জয় হয় সত্যের। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের জয় হলো বলেই মনে করা হচ্ছে।