রাজীব ঘোষ: হাইওয়ে ধরে বর্ধমান জেলার শক্তিগড় এর উপর দিয়ে যারাই যান তারা অন্তত একবারের জন্য শক্তিগড়ে ল্যাংচার স্বাদ আস্বাদন করতে চান। কারণ শক্তিগড়ের ল্যাংচার(Lancha of Shaktigarh) একটা খ্যাতি রয়েছে বলেই জানা যায়। ফলে ওই রাস্তার উপর দিয়ে অর্থাৎ শক্তিগড়ের উপর দিয়ে যে সমস্ত পর্যটকেরা বেড়াতে যান বা নিয়মিত যারা যাতায়াত করেন কিংবা কোনো দরকারি কাজে ওই রাস্তার উপর দিয়ে যান, তারা শক্তিগড়ে বিভিন্ন ল্যাংচার দোকান এর সামনে দাঁড়িয়ে যান। আর সেখান থেকে ল্যাংচা কিনে খেতে পছন্দ করেন।
এবার শক্তিগড়ের সেই বিখ্যাত ল্যাংচার দোকানগুলিতে হানা দিল খাদ্য দপ্তরের ফুড সেফটি বিভাগের অফিসাররা। তার মূল কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ আসছিল, শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলিতে পচা, বাসি ল্যাংচা বিক্রি করা হচ্ছে, যার ফলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জানা গিয়েছিল, একুশে জুলাই এর শহীদ দিবসে ধর্মতলায় যাওয়ার জন্য শক্তিগড় এর উপর দিয়ে বহু গাড়িতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যাবেন। আর তারা যাতায়াতের পথে শক্তিগড়ের ল্যাংচা দোকানগুলি থেকে ল্যাংচা কিনে খাবেন। সেই কারণে ল্যাংচার দোকানগুলি দীর্ঘদিন ধরে পচা ছত্রাক ভর্তি বাসি ল্যাংচাগুলি মজুত করে রেখেছিল।
আরও পড়ুনঃ আনাজের দাম বেশি কেন? বাজারে হাজির মহকুমাশাসক
একুশে জুলাই এর উদ্দেশ্যে যাওয়া গাড়িতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে ওই ল্যাংচাই কিনে খেতেন। আর এই খবর গোপন সূত্রে পাওয়ার পরেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর, জেলা পুলিশ এবং ফুড সেফটি বিভাগের অফিসাররা যৌথভাবে অভিযান চালায়। অভিযানে গেলে তারা দেখতে পান, ল্যাংচার দোকানগুলিতে নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যারা ল্যাংচা তৈরি করছেন, তারা এতটুকু স্বাস্থ্যকরভাবে খাবার তৈরি করছেন না। শুধু তাই নয়, আধ কাঁচা, পচা, বাসি, ছত্রাক ভর্তি ল্যাংচা মেঝের উপর ডাই করে মজুত করে রাখা আছে। এই ল্যাংচাগুলি একুশে জুলাই এর দিন যখন গাড়িতে করে মানুষ ধর্মতলার উদ্দেশ্যে যাবেন, তাদেরকে ভেজে সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেবেন বলে পরিকল্পনা করেছিল ল্যাংচার ব্যবসায়ীরা।
আর সেই খবর পেয়েই ফুড সেফটি বিভাগ, স্বাস্থ্য দপ্তর এবং জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান চালায়। সেখান থেকে সমস্ত পচা, বাসি, ছত্রাক ভর্তি ল্যাংচা এক জায়গায় করে জেসিবি দিয়ে মাটিতে বড় গর্ত করে সমস্ত ল্যাংচা ফেলে পুঁতে ফেলা হয়। বেশ কিছু ল্যাংচা দোকানদারকে আইনি নোটিশ ধরানো হয়। বেশ কিছু ব্যবসায়ীর নামে পুলিশে ডাইরি করা হয়েছে। তার মধ্যে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৭ জন ল্যাংচা দোকানদারের কোনো ধরনের লাইসেন্স নেই। আর এই অপরাধগুলির জন্য ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের সাত বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা করা হতে পারে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে জানানো হয়েছে, বর্ধমানের শক্তিগড়ের ল্যাংচা দোকানগুলি থেকে ল্যাংচা কিনে খাবেন না। শক্তিগড়ে ল্যাংচার অসাধু দোকানদারদের উদ্দেশ্যে এই যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডক্টর সুবর্ণ গোস্বামী এবং ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডি ইবি)। আর এই ঘটনা জানতে পেরে সাধারণ মানুষও হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। তার কারণ, তারা সকলেই শক্তিগড়ের ল্যাংচার খ্যাতি রয়েছে বলে সেখানে ল্যাংচা কিনে খেতে চান। স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্তকতার পরে তারা সাবধান হয়ে যাবেন।