নিসর্গ নির্যাস মাহাতো: নির্বাচনের পরে তো ওঁ মুখ্যমন্ত্রী-ই থাকবেন না। তখন সন্দেশখালি যাবেন কী করে? হাড়োয়ায় ভোট প্রচারে গিয়ে বৃহস্পতিবার এমনটাই বললেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন বসিরহাটের বাম প্রার্থী নিরাপদ সর্দারের সমর্থনে রোড শো করেছেন সেলিম।উল্লেখ্য, সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ভোটে তৃণমূল প্রার্থী জেতার পরে তিনি প্রথমে সন্দেশখালি গিয়ে মিষ্টি খাবেন। তারই পাল্টা দিলেন সেলিম।
এদিন তিনি বলেন, মণিপুরে দাঙ্গা হচ্ছে এক বছর ধরে সেখানে যায়নি মোদি। সন্দেশখালিতে অশান্তির সময় ৩-৪ মাস ধরে যেতে পারেননি মমতা। আসলে ওঁরা ভয় পেয়েছেন।
গত ২২ মে গড়বেতা ও মেদিনীপুরে নির্বাচনী প্রচারে এসে সেলিম বলেন, নির্বাচনে সকলে বঞ্চনার হিসেব বুঝে নেবেন। সন্ত্রাস-ঘর ছাড়া ও মিথ্যে মামলার জবাব দেবেন। এদিন তাঁর নিশানায় ছিল তৃণমূল ও বিজেপি- রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার।
ওইদিন তিনি বলেন, বছরের পর বছর বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। যুবকরা বাধ্য হয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছে। দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে শোষণ। চাকরি বিক্রি করা হচ্ছে অযোগ্যদের। বিক্রি করা হচ্ছে দেশকে। গরু ও কয়লা পাচার করা হচ্ছে। সন্দেশখালির মতো রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মা ও বোনদের সম্মান নিয়ে খেলা হচ্ছে। অস্ত্র ও ড্রাগের কারবারি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে। সেলিমের কটাক্ষ, তৃণমূল ও বিজেপি আসলে এক শরীরে দুই দল। জনগণকে ভাঁওতাবাজি দেওয়া হচ্ছে।
বলেন, ওরা প্রশ্ন তোলে বাম ও কংগ্রেস কেন একসঙ্গে জোট বেঁধেছে? এরপরেই বলেন, বাজারে আগুন লাগলে সরকারের কেও ছুটে আসে না। পুলিশ আসেই না। এলাকার সমস্ত মানুষ ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, দল ভুলে ছুটে আসে। তখন দেখা হয় না কে বাম আর কে কংগ্রেস। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতেও তাই এক হয়ে তৃণমূল ও বিজেপির বিরোধিতা করা হচ্ছে। সবাই এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এদিন মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও সরব হয়েছেন সেলিম। তিনি বলেন, জোড়া ফুল ও পদ্মফুল রাজনীতি করছে মিথ্যাচার ও গুজবের। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। জাতপাত, হিন্দু-মুসলমান করে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের চাহিদার কথা ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সেলিমের বক্তব্য, মোদি ও মমতা আসলে ‘ভাব’ নিচ্ছে। যা নয় তা সেজে অভিনয় করছে। বলেন, হিন্দু-মুসলমান নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। বলেন, চোরকে নামানো হয়েছিল সততার প্রতীক দেখিয়ে। আর একজন ভীতু যে সাংবাদিক সম্মেলন করতে-সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে ভয় পায় তাকে নামানো হয়েছিল সাহসী বলে। সেলিম বলেন, বিভাজনের রাজনীতি বরদাস্ত নয়। বলেন হিন্দু ও মুসলিম ধর্মকে বর্ম করে আসলে অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ওরা ছোট চোর ও বড় চোর। কটাক্ষ করে বলেন, ওদের নেতৃত্ব বারবার নিজেদের মধ্যে দল বদল করে। তিনি বলেন ওদের সিলেবাসে ধর্মের রাজনীতি তাই মন্দির-মসজিদ-এনআরসি-৩৭০ ধারার কথা বলে কিন্তু আমরা হক রুটি-রুজির কথা বলতেই বিপাকে পড়ে যায়। বলেন, এখন দাঙ্গার রাজনীতি চলে। সেলিমের দাবি, পঞ্চায়েতের সময় ভোট লুঠ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সভা করতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নাম নিলেন সাহস থাকলে সরাসরি আরএসএস ও তার বিভিন্ন শাখার কথা বলতেন। সেলিমের দাবি, আসলে ‘সফট্ টার্গেট’ করা হয়েছে। বলেন, মমতা বলছেন তিনি যা করেছেন তা বলতে গেলে রামায়ণ ও মহাভারত শেষ হয়ে যাবে। সেলিমের কটাক্ষ, এগুলি ভাব নেওয়া। মোদি নিজেকে অবতার ভাবছেন। মমতা নিজেকে দেবী ভাবছেন। আসলে ‘খোদার ওপর খোদগারি’ চলছে। বলেন, বিনাশ কালে এমন হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশে এদিন বাতিল হয়েছে ২০১০ সালের পর থেকে ইস্যু করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট। যদিও বলা হয়েছে, ওই শংসাপত্রে যারা ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়েছেন তাঁদের চাকরি যাবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে এই শংসাপত্রে চাকরি সহ কোনও সুবিধা পাওয়া যাবে না। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ মানা হয়নি। তিনি বলেন, ওবিসি শংসাপত্র বিলোনো হয়েছে টাকার বিনিময়ে। এভাবে ওবিসি সংরক্ষণের নামে সংখ্যালঘুদের সুবিধা ধ্বংস করেছেন মমতা ও তাঁর সরকার।
ওইদিন মেদিনীপুরে গান্ধিমূর্তির পাদদেশ থেকে শহরের রিং রোড প্রদক্ষিণ করে বাম ও কংগ্রেসের পদযাত্রা।