ব্যক্তি বুদ্ধদেব (Buddhadeb Bhattacharjee) কেমন ছিলেন তা দেখার সুযোগ পাননি অনেকেই। আর তাঁর চলে যাওয়াটা এখনও মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। অনেকের মনেই নতুন করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে (Buddhadeb Bhattacharjee) চেনার ইচ্ছে জেগেছে, হাজারও প্রশ্ন উঠেছে তাঁর অজানা ব্যক্তিসত্তা নিয়ে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যাঁরা দেখার সৌভাগ্য করেছেন বা দু-একটা কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাটাও জানার জন্য অনেকেই উৎসুক। সেই উত্তর খুঁজতেই এক সংবাদ মাধ্যম যোগাযোগ করেছিল অভিনেতা বাদশা মৈত্রের সঙ্গে। সেখানেই খোলসা হল এদিন। অন্যদিকে বুদ্ধদেবের প্রয়াণ মেনে নিতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন জিতুও। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু বলে ফেলেছেন যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
বাদশা বলেছেন, ‘দেখার সুযোগ আমার খুব বেশি হয়নি। ফলে, ওঁর এই দিক আমার কাছে অনাবিষ্কৃত। আমার কাছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার আর একটি নাম। এই ক্ষেত্রে ওঁর সৎ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা আজীবন স্মরণ করার মতো। যদিও রাজ্যবাসী সেটা বুঝতে পারেনি। আমার মতে, এই না বুঝতে পারাটা রাজ্যের জন্য বড় ক্ষতি।’ বাদশা আরও জানিয়েছেন যে বুদ্ধবাবুকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতি যখন জমা হল, তখন আর উনি মুখ্যমন্ত্রী নেই।
বুদ্ধবাবুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ কেমন ছিল অভিনেতার?
অভিনেতা জানিয়েছেন, সেই সময় নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে একটা লেখার অনুরোধ পেয়েছিলেন। নিজে গিয়ে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘুরে আসার পর তিনি বুদ্ধবাবুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধবাবুও এক কথায় রাজি হয়েছিলেন। সেই সময় মুখোমুখি বসে সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিল্পের জন্য টাটাদের আসা এবং চলে যাওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন। বাদশার কথায়, এমন ভদ্র মানবিক মানুষ আগে কমই দেখেছেন তিনি।
কী বলেছেন জিতু?
বুদ্ধদেবের প্রয়াণে, সিপিআইএম দলকে নিয়ে শোক প্রকাশ করে জিতু একটি লম্বা পোস্ট ছুঁড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। লিখেছেন, ‘ হিড়িক পড়েছে ছবি দিয়ে ব্যতিক্রমী পোস্ট করার, হিড়িক পড়েছে শ্রদ্ধার ঝুলি খুলে দিয়ে রাজপথে ফুল ঝরানোর, হিড়িক পড়েছে ওর সাথে জড়িত সমস্ত সুখ স্মৃতি উজাড় করার, হিড়িক পড়েছে কমরেড বলে একে অপরকে সম্মোধন জানানোর। আজ থেকে আর কমরেড বলে আমায় নাইবা ডাকলেন। আর যদি ডেকেও ফেলেন, দয়া করে একটি বারের জন্য অনুমতি চাইবেন। সিপিআইএম রইলাম না আর, বুদ্ধপন্থী বলে রইলো আমার পরিচয়। সুবিধা অসুবিধা কোন কিছুই কিন্তু নিইনি কোনদিন। তাই পল্টিবাজ ধাপ্পাবাজ চিটিংবাজ ভাষাজ্ঞান শূন্য মন্তব্য নাইবা করলেন সিপিআইএম। আমার বন্ধু-আমার পথপ্রদর্শক-আমার ঈশ্বর। বিদায়। বিদায় বন্ধু বিদায়…পরপারে স্লেট হাতে আবার যাব, পিছু পিছু তোমার।’
আরও পড়ুনঃ Jhargram: ঝাড়গ্রামে হবে টাইগার সাফারি, ঘোষনা মুখ্যমন্ত্রীর
জিতুর এই মন্তব্যকে অনেকেই ভালো চোখে দেখেননি। একজন বলেছেন, ‘বুদ্ধবাবু যেই দলের সাথে আজীবন থেকেছেন।যেই দলের আদর্শ’কে নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছেন।সেই দলকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য প্রকারন্তরে বুদ্ধ বাবুর আদর্শ’কে অসম্মানিত করা।এইটুকু সহজ,সরল সত্য আপনার মতো মেধাবী মানুষ নিশ্চয়ই বোঝেন!’
আরও একজনের দাবি, ‘সমস্যা টা তো ওখানেই। আমরা সঠিক সময়ে ভুল ধরিয়ে সংশোধন করবার চেষ্টা করিনা বা করতে সুযোগ পায় না। অপেক্ষায় থাকি কবে ভুল সময়ে ভুল ধরবো.. যদিও সঠিক সময়ে কোন প্রশংসা করার বিষয়ে, প্রশংসা করতে পারিনা বা করতে চাই না। কোভিডের সময় আপনি সহযোগিতা পাননি – অভিমান থাকতেই পারে, কিন্তু যারা পেয়ে কিছুটা হলেও হাসপাতালের চাপ কমিয়েছিল, সেটা কি প্রশংসার নয়!! সেই বিষয়ে ওই লাইনগুলোতে যদি একলাইন পেতাম!আপনি যে পন্থা-ই ত্যাগ করুন / যুক্ত হোন, আপনার দেওয়া কিছু রিপ্লাই অবাক করলো। আপনার হয়তো অনেকদিনের ইচ্ছে-কে প্রকাশ করার জন্য আজ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেলেন বলে মনে হলো।’
কেউ কেউ অবশ্য অভিনেতা জিতু কমলের হয়ে কথা না বললেও, বিতর্কের আগুনে জল ঢালতে চেয়েছিলেন, তাই বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছিনা, ওনাকে কেন আক্রমণ করা হচ্ছে? ওনার ব্যক্তিগত মতামত উনি দিয়েছেন, সেটা দলের অনুকূলে হতে পারে আবার নাও হতে পারে, তা বলে আক্রমণ দরকার নেই। বরং একটাই কথা বলব, সিপিআইএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের ২০১১ তে বিদায়ের পর এহেন বহু মানুষ দল ছেড়েছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করিনা, কারন তারা ছেড়েছেন নিজেদের কারোর স্বাদ পূর্ণ হয়েছে, বা কারোর আদর্শের প্রতি ভালোবাসা ছিলনা বলে। সুতরাং জিতু কামাল হোক কি অন্য কেউ, আমাদের এহেন বক্তব্য এড়িয়ে গিয়ে আমাদের যা কাজ তাই করা উচিত।’