রাজীব ঘোষ: লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বঙ্গ বিজেপির মধ্যে অন্তর্কলহ যেন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তার কারণ ২০১৯ সালের দখল করা ১৮ টি আসন এবার ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ২০২৪ এর লোকসভায় এসে তা কমে দাঁড়ালো ১২তে। আর তারপর থেকেই দলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকট চেহারাটা ফুটে উঠছিল। সব থেকে বেশি যে বিষয়টি বিজেপির নেতাকর্মীদেরকে ভাবাচ্ছিল, তা হলো প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
আরও পড়ুনঃ Vistadome Coach: হাওড়া-এনজেপি শতাব্দীতে নয়া কোচ, রেল সফরে চোখের সামনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জঙ্গল সাফারি
তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র পরিবর্তন করে দেওয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের বদলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বর্ধমান- দুর্গাপুর কেন্দ্রে। আর স্বাভাবিকভাবেই একেবারে নতুন কেন্দ্রে গিয়ে তাকে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়। যদিও একসময় রাজ্য সভাপতি ছিলেন, তাই পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে দলীয় কর্মীদেরকে নিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। আবার ওদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পলকে দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। তিনিও জয় লাভ করতে পারেন নি। আর এরপরেই খানিকটা ক্ষোভ অভিমানের সুরেই দিলীপ ঘোষ বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে কিছু মন্তব্য করেন। দল এবারে হারার পিছনে যে কাঠিবাজি করা হয়েছে, সেটিও তিনি প্রকাশ্যে বলে ফেলেন। যদিও তারপর থেকে তিনি চুপ করেই ছিলেন।
এবার সামনেই বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচন। তার কারণ সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন। ফলে রাজ্য সভাপতি পশ্চিমবঙ্গে কে হবেন, তা নিয়ে একটা জল্পনা চলছে। আর তার মধ্যেই বিধানসভার ৪টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হার হয়েছে বিজেপির। এরকম একটা সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের সভায় উপস্থিত হলেন দিলীপ ঘোষ।
সভায় উপস্থিত হয়ে প্রথমেই জেলা সভাপতির উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি আজকে যে আমাকে ডেকেছেন, মনে রেখেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এরপরেই দিলীপের বক্তব্য, প্রয়াত তপন সিকদার একসময়ে রাজ্য সভাপতি ছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি থেকে এবার কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন। সেটা আমাদের কাছে গর্বের এবং সৌভাগ্যের। তাকে অভিনন্দন জানাই। তবে দিলীপ মনে করিয়ে দেন, এর আগেও কেন্দ্রে বিজেপি দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু মেদিনীপুর থেকে সেই ভাবে কাউকে দেখতে পাইনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের কর্মীরা ভালো লড়াই দিয়েছিল। সমস্ত বুথ, মন্ডল সভাপতি থেকে শুরু করে সকলকে নিয়ে সেই লড়াই লড়েছিলাম। তবে কাউন্টিং সেন্টারে যে ঘটনা ঘটে তার ফলে আমাদের কর্মীরা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল, সভায় বলেন দিলীপ। তিনি বক্তব্যে আরও বলেন, লোকসভা নির্বাচনে ফল হয়তো একটু খারাপ হয়েছে। কিন্তু আসল লড়াই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠন করতে হবে। মানুষের জন্য যে সমস্ত সামাজিক প্রকল্পগুলো করা হয়েছে, সেগুলো এখানে মানুষকে জানাতে হবে। ১৯ সালের ভোটে ৪৮ শতাংশ ভোট মেদিনীপুরে পেয়েছিল বিজেপি, সারা রাজ্যজুড়ে ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। এবার সেই শতাংশ কমে গিয়ে ৩৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। কেন ভোট কমেছে, তার মূল কারণ খুঁজে বার করতে হবে। সমস্ত কিছু দূরে সরিয়ে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। যাতে ৭৭ জন বিধায়কের সংখ্যা থেকে ২০২৬ এর নির্বাচনে ১৭৭ এ পৌঁছে যেতে পারি। এই লক্ষ্য নিয়ে দলের একদম নিচুস্তর থেকে উপর পর্যন্ত কাজ শুরু করে দিতে হবে। এদিনের সভা থেকে আত্মবিশ্বাসী বার্তা দিলেন দিলীপ ঘোষ।
সভায় উপস্থিত বিজেপির কর্মীরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে অনুরোধ করেন, বর্তমানে বিজেপি দলের যে পরিস্থিতি, সেখানে দলকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন একমাত্র দিলীপ ঘোষ। দিলীপ দার নেতৃত্বেই বিজেপি আরো সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে পারে। তাই অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে করা হোক। কর্মীদের এই দাবি শুনে সুকান্ত মজুমদার সভায় বলেন, মেদিনীপুরের মাটি থেকে দিলীপ দার নেতৃত্বেই বিজেপির উত্থান হয়েছিল। দিলীপ দার প্রতি দলীয় কর্মীদের একটা আলাদা সেন্টিমেন্ট আছে। তবে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মাবলী আছে। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিজেপির একেবারে নিচু চলার কর্মী সমর্থকরা এখনো দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বেই লড়াই করলে বিজেপি যে এগিয়ে যেতে পারে সেই বিষয়ে তারা সকলেই একমত।