দেবব্রত মণ্ডল: গত লোকসভা ভোটের ফলাফলকে ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করল সিপিএমের(CPIM) কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে ২৩ টি আসনে লড়েছিলেন বাম প্রার্থীরা। কিন্তু কোন প্রার্থী জিততে পারেননি, শুধু তাই নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জামানত জব্দ হয়েছে বাম প্রার্থীদের। এতদিন বিরোধীদের তো বটেই সিপিএম সমর্থকদের মধ্যেও অনেককে বলতে দেখা যেত দলে বৃদ্ধতন্ত্রের বাড়বাড়ন্তের জন্যই ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছেন বাম প্রার্থীরা। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে সৃজন, দীপ্সিতার মতো তরুণ মুখ নিজেদের গড় রক্ষা করতে পারেননি। তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি একদিকে যেমন সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোটের মতো কারণগুলিকে সামনে এনেছে তেমনি নিজেদের ভুল নিয়েও সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়েছে মহম্মদ সেলিমদের।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বামেদের নিয়ে যথেষ্ট প্রচার হলেও অনেকক্ষেত্রেই তার সঙ্গে বাস্তবের মিল ছিল না। বঙ্গ সিপিএম রাজ্যের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, কিন্তু বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই তাই উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতাকেই বেছে নিয়েছেন। অন্যদিকে ভোটের প্রচারে তৃণমূল সুপ্রিমো বারংবার অভিযোগ করেছেন বাম – বিজেপি আতাতের। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন হলেও সিপিএম যেহেতু বিজেপি বিরোধী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি তাই জনগণের একটা বড় অংশ মমতার তোলা বাম – বিজেপি আতাতের অভিযোগকে সত্যি বলে মেনে নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ রথে মাসি বাড়ি নয়, সংরক্ষণাগারে যেতে চান জগন্নাথ
তবে এরপরই ভোটে হারের জন্য রাজ্য সিপিএমের বিচক্ষণতার অভাবকে দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তাদের মতে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব লক্ষীর ভাণ্ডার সহ অন্যান্য প্রকল্পের গুরুত্ব যতই অস্বীকার করুক এই প্রকল্পগুলি গ্রামের মানুষের ভোট কোনদিকে যাবে তা অনেকাংশে নির্ধারণ করে দিয়েছে। সিপিএম যেভাবে বারংবার এই সমস্ত প্রকল্পকে ‘ভাতা’ বা ‘ভিক্ষা’ বলে অভিহিত করেছে তাতে গ্রামের মানুষ বিশেষত মহিলাদের ভোট অনেকাংশে সিপিএমের থেকে সরে গেছে।
তবে এসবের পাশাপাশি ভোটে হিংসা, ছাপ্পা, বিভিন্ন বুথে পোলিং এজেন্ট না দিতে দেওয়ার মতো ঘটনাকেও ভোটে হারার কারণ বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই তথ্য মেলার পর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি অবশ্য সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছে।