রাজীব ঘোষ: বাজারে গিয়ে কোনো সবজিতে হাত দেওয়ার জো নেই। হাত দিলেই যেন আগুনের ছ্যাকা লাগছে। দিনের পর দিন শাক সবজির দাম একেবারে আকাশ ছোঁয়া। কেন্দ্র বা রাজ্য যে সরকারের কথাই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট দূর করার মতো কোনো উদ্যোগ কারোর তরফেই সেই অর্থে দেখা যায় না। ভুগতে থাকে সাধারণ, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র মানুষজন। তবে এবার দেখা গেল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) আকাশ ছোঁয়া সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার আরো ফরমান, ১০ দিনের মধ্যে বাজারে সবজির দাম কমাতেই হবে। আর প্রতি সপ্তাহে কতটা করে দাম কমলো, সেই রিপোর্ট তার কাছে জমা দিতে হবে। বাজারের দিকে যেন আগুনের গোলা ছুটছে। লঙ্কা, বেগুন, পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়স, উচ্ছে, সমস্ত সবজি একেবারে ৯০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্যি কোথায়?
তাই এই পরিস্থিতিটা সম্যক বুঝতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যবসায়ীরা এই লাগামছাড়া দাম বাড়ার জন্য অনাবৃষ্টিকে দায়ী করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী(Chief Minister) সেই বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের জন্য এই দাম বৃদ্ধি। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সবজির দাম বাড়িয়ে মুনাফা নিতে চাইছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। কৃষকেরা বাড়তি দাম পাচ্ছেন না। কেন এই ধরনের জিনিস চলবে? মঙ্গলবার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখানেই আকাশছোঁয়া সব্জির দাম শুনে মানুষ বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি নির্দেশ জারি করেন, ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। নবান্নের বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাস্ক ফোর্স এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, টাস্ক ফোর্স গঠন করে দিয়েছিলাম। তারা বৈঠকে কবে বসেছে জানা নেই। যতদিন দাম না কমছে, ততদিন নিয়মিত বৈঠকে বসতে হবে। মুখ্য সচিব, ডিজিকে নির্দেশ দিচ্ছি, প্রতি সপ্তাহে আমার রিপোর্ট চাই। ১০ দিনের মধ্যে দাম কমাতেই হবে।
আরও পড়ুনঃ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম!সেন্ট্রাল জেলে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার গৃহশিক্ষকের, খুনের অভিযোগ পরিবারের
আর এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী তুলে আনেন আলু এবং পেঁয়াজের রপ্তানির প্রসঙ্গ। হঠাৎ আলু বা পেঁয়াজের দাম এত বাড়ছে কেন? নবান্নের বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি নাসিক থেকে পেঁয়াজ কিনলে বেশি কমিশন পান? নিজের রাজ্যের চাষীদের কাছ থেকে কেন পেঁয়াজ কিনছেন না? প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে যতটা পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। আর নাসিক থেকে বাংলার ব্যবসায়ীরা পেয়াজ কিনে আনছে। এই ব্যাপারেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, আমার রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে। সে যাক, তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের চাহিদা মেটানোর পরে তা রপ্তানি করা হবে। কৃষি দপ্তর কি করছে? এগুলো দেখছে না কেন? অবিলম্বে নজরদারি চালিয়ে এই সমস্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে এদিনের বৈঠকে প্রশাসনিক আধিকারিকসহ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী তার অসন্তোষের কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন। পাশাপাশি রাজ্যের চাষীরা যদি পেঁয়াজ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে তারা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, তেমনি বাংলাকে অন্য রাজ্যের উপর পেঁয়াজের জন্য নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না। সেই বিষয়টিও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এবার দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও বাংলার বাজারে আলু, পেঁয়াজ সহ শাক সবজির দাম আদৌ কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে?