মধুসূদন মাহাত: ভাবতেই পারিনি এভাবেও বিকল্প কর্মসংস্থান(Alternative employment) এবং বিকল্প আয়ের উপায় বের করা যায়! জঙ্গলের গাছের কোনরূপ ক্ষতি না করেই শুধুমাত্র গাছের আগাছাগুলি পরিষ্কার করে সেই জায়গাগুলিতে আনারস চাষ করা যায়। জমি পাহাড়ি পাথুরে হলেও এই চাষে কোন অসুবিধা নেই। বর্ষার সময় আনারসের ডগা পুতে দিলেই ব্যাস। নতুন করে আর জল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সার কীটনাশক দেওয়ার দরকার পড়ে না। গরু ছাগলেও তেমন ক্ষতি করে না। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে আগাছা পরিষ্কার করে দিলেই হল। বছর শেষে একটি গাছে একটি আনারস। দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকা। পরের বছর ওই একটি গাছের গোড়া থেকে অন্তত পাঁচ সাতটি নতুন গাছের জন্ম। বনের ভিতরে আনারস চাষ জঙ্গলমহলে(Jangalmahal)প্রথম শুরু করেন রানিবাঁধ ব্লকের রাওতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাওয়াটাঙ্গা মৌজার প্রসাদ মান্ডি। তিনি পাঁচ বছর ধরে এই চাষ করে যাচ্ছেন। এ বছর তিনি এক লাখ তিরিশ হাজার টাকার আনারস বিক্রি করেছেন। উদ্বুদ্ধ হয়ে পাশের জঙ্গলে বারিকুল অঞ্চলের বাগডুবি মৌজার বড়শোলএর সোমলাল মান্ডিও আনারস চাষ শুরু করেছেন। এবছর তিনিও প্রায় ২০০ পিস আনারস বিক্রি করলেন।
একটা দারুন আনন্দদায়ক যে, এই অঞ্চলে ময়ূরের সংখ্যা বাড়ছে। আনারস গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে সোমলাল, প্রাসাদ মান্ডিদের যেহেতু নিয়মিত জঙ্গলে ঘোরাফেরা করতে হয় তাই বিষধর চন্দ্রবোড়াদের মুখোমুখি এরাকে প্রায়শই হতে হয়। আবার ময়ূরের প্রধান খাদ্য যেহেতু এই চন্দ্রবোড়ারা তাই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রাসাদ মান্ডি, সোমলাল মান্ডিরা আর ময়ূর হত্যা করে না। বরং ময়ূর শিকার করা উচিত নয় বলে পাশাপাশি লোকজনদের সচেতন করে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর যে, জঙ্গলে আগুন লেগে যাতে আনারস গাছ পুড়ে না যায়, তাই জঙ্গলে যাতে আগুনই না লাগে সেই জন্য এরা পাশাপাশি এলাকাগুলিতে তীক্ষ্ণ নজর রাখে।
আরও পড়ুনঃ মেঘাছন্ন জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে বেলা বাড়লেই বাড়তে পারে বৃষ্টির পরিমান
প্রসাদ মান্ডি সোমলাল মান্ডিদের এই উদ্যোগ জঙ্গলমহলে(Jangalmahal)নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নতুন আয়ের দিশা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি বনের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার অভিনন্দনযোগ্য উদ্যোগ। সরকার কি এটা ভেবে দেখবে? বন দপ্তর যদি বন রক্ষা কমিটিগুলিকে দিয়ে এই কাজ করানোর জন্য এগিয়ে আসে তাহলে জঙ্গলমহলে(Jangalmahal) কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়ে যেতে পারে। সরকার কি ভাববে সে কথা?
সরকার ভাববে, নাকি ভাববে না সেটা তো সরকারের ব্যাপার। কিন্তু ৩৬ কিলোমিটার দূরের এই কাওয়াটাঙা আর বড়শোলের লেখাপড়া না জানা মানুষগুলোর নতুনত্বের শক্তি আমাকে বারবার টেনে নিয়ে আসে।