বিক্রম ব্যানার্জী: স্বচক্ষে সন্তানকে মরতে দেখা কতটা যন্ত্রণার তা জানে শুধু তারাই যারা এই ঘটনার ভুক্তভোগী। যার আগমনে একদিন হঠাৎই খুশির জোয়ার এসেছিল পরিবারে, নিমেষে তা ধুলিস্যাৎ করে দিল মৃত্যুর টান। মঙ্গলবার এক বাবার সন্তান বিয়োগের দৃশ্য(Suicide) চাক্ষুষ করলেন ট্রেনের সহযাত্রীরা। ঘটনাস্থল, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার সুভাষ গ্রাম ষ্টেশন। এদিন বাবার সাথে কর্মক্ষেত্রে পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠেছিল চিকিৎসক মেয়ে। বাবাও শহরের একজন নামকরা ডাক্তারবাবু। ট্রেনের গতি যখন আশপাশের যানবাহনকে হার মানিয়ে সুভাষগ্রাম স্টেশন ছাড়াল ঠিক সেই সময়ে মেয়েকে ট্রেন থেকে ঝাঁপ(Suicide) দিতে দেখে মুখের বুলি খোয়ালেন বাবাও।
সূত্রের খবর, ওই মহিলা চিকিৎসকের বাড়ি ইএম বাইপাস সংলগ্ন অন্দরপুরের মাদুরদহ এলাকায়। বাবা অলোক পাল একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মেয়ে সংগীতা জেনারেল ফিজিশিয়ান। দুজনের কর্মস্থল এক হওয়ায় প্রতিদিন বাবার সাথে ট্রেনে করে যাতায়াত করতেন ওই মহিলা চিকিৎসক। মঙ্গলবারও সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি। নিত্য দিনের মত মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের একটি কামরায় উঠে পরিচিত সহযাত্রীদের সাথে গল্প জুড়েছিলেন অলোক বাবু। এদিকে মেয়ে কখন ট্রেনের দরজার কাছে চলে গিয়েছে দেখা হয়নি। মেয়ের কথা মাথায় এলো তখন ট্রেন যখন সুভাষগ্রাম স্টেশন ছাড়িয়ে দৌড়চ্ছে।
চোখে পড়ল এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। চলন্ত ট্রেন থেকে আচমকা ঝাঁপ দিলেন মেয়ে সংগীতা। সন্তানের দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তে নির্বাক হয়ে পড়েন বাবা অলোক। পরবর্তীতে রেল পুলিশের সহায়তায় তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ এনআরএস হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত মহিলা চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। জানা যায়, 2009 সাল থেকে মানসিক অবসাদ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন সংগীতা। বেশিরভাগ সময়েই নিজেকে সকলের থেকে আলাদা রাখতেন তিনি। মেয়ে যাতে একাকিত্বে না ভোগে তার জন্য সঙ্গীতাকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন বাবা। 2019 সালে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন হাতে পান ওই মহিলা চিকিৎসক। এরপরই নিয়মিত বাবার সাথে চেম্বারে যেতে শুরু করেন তিনি। পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক চিকিৎসা চলছিল সঙ্গীতার। সেই কারণে বিয়েও হয়নি। তবে মেয়ে যে এভাবে নিজেকে শেষ করে দেবে সে একথা দুঃস্বপ্নেও দেখেননি অলোক বাবু।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ভারতে না এলে কিছু যায় আসে না! চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে বিস্ফোরক হরভজন সিং