রাজীব ঘোষ: ইউরো কাপের(EURO CUP)সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মতো জোরদার দলের বিরুদ্ধে যে খেলা দেখালেন স্পেনের লেমিনে ইয়ামাল(Lamine Yamal), তাতে চমকে যেতে হয়। লেমিনে ইয়ামালের বয়স ১৬ বছর হলেও ফুটবলে দুর্দান্ত খেলা দেখিয়ে গোল করলেন। ইউরো কাপের ইতিহাসে তিনিই হলেন সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা। শুধু তাই নয়, বারবার গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে ফ্রান্সকে একেবারে নাকানিচোবানি খাইয়েছেন। প্রতি মিনিটে ইউরো কাপের সেমিফাইনাল খেলায় বদলে গেল পুরো খেলার ধরন। স্পেন কখনো আক্রমণ করছে, পরক্ষণেই প্রতি আক্রমণ করছে ফ্রান্স। আর এভাবেই একের পর এক খেলার পরিবর্তন ঘটিয়ে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিল স্পেন। ইউরো কাপের ফাইনালে উঠে গেল স্পেন। কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সকে আপাতত সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো।
ইউরো কাপের খেলায় এমবাপে চোট পাওয়ার পর ফেস গার্ড পড়ে খেলছিলেন। তবে আগের মতো সেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল না তাকে। চেনা দৌড় নেই। পায়ে বেশিক্ষণ বল ধরে রাখতে পারছেন না। পরে সেমিফাইনালে ফেসগার্ড খুলেই এমবাপে খেলতে নামেন। তবে এমবাপের চেনা ছন্দে খেলা ফিরতেই ফ্রান্সের খেলার ছবিটাও বদলাতে শুরু করে।স্পেন এই সেমিফাইনাল ম্যাচে প্রথম গোল করার সুযোগ পায়। সেটাও ওই ইয়ামালের পা দিয়ে। মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় ইয়ামাল বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বক্সে ঢুকে বল ভাসিয়ে দেন তিনি। আর দ্বিতীয় পোস্টের কাছে ছিলেন ফাবিয়ান রুইজ। একটু লাফাতে পারলেই ভালোভাবে তিনি হেড করতে পারতেন। বলটা ধরে রাখতে পারেননি। এই সুযোগ নষ্ট করতেই ফ্রান্স আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। একেবারে বাঁ দিক দিয়ে বল ধরে বক্সে ঢুকে যান এমবাপেরা। বল বাড়িয়ে দেন মুয়ানির দিকে। তারপরেই ঠান্ডা মাথায় মুয়ানি হেড করে বল ঢুকিয়ে দেন। প্রথমবার ইউরো কাপে ওপেন প্লে থেকে গোল করে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। আর যখনই ফ্রান্স গোল দিয়ে দেয়, তারপরেই স্পেনের গতি বাড়তে শুরু করে। একদিকে ইয়ামাল এবং অন্যদিকে নিকো উইলিয়ামস দুর্দান্ত খেলছিলেন। বারেবারে বল নিয়ে তারা ঢুকে যাচ্ছিলেন। ইয়ামাল ২১ মিনিটের মাথায় জাদু দেখালেন। প্রথমেই ডান দিকে ঘুরে নিমেষের মধ্যে বাঁদিকে ঘোরেন তিনি। ২- ডিফেন্ডারকে কাটিয়েই বুঝে যান এবার গোল দেওয়ার সুযোগ। বাঁ পায়ে পাক খাওয়ানোর শট মারেন তিনি। ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মাইগনান তার ওই শট বাঁচাতে পারেননি। বল ঢুকে যায় গোলে। গোল করেই ইয়ামাল সতীর্থকে ধরে কেঁদে ফেলেন। বোঝা যাচ্ছিল তার কাছে এই গোল কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুরের সরকারি স্কুল দেখে অভিভূত, সূদুর আমেরিকা থেকে টাকা পাঠালেন অধ্যাপক
খেলার প্রথমার্ধে টানটান লড়াই চলছিল। প্রতিটি বলের জন্যই লড়াই চলছিল দুই দলের ফুটবলাররা। মাঝেমধ্যেই ফাউল করে ফেলছিলেন। স্পেন খেলার গতি কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছিল। তার মধ্যেই প্রতি আক্রমণ থেকে ফ্রান্সের এমবাপে ৮৫ মিনিটের মাথায় বল পেয়ে যায়। বক্সে ঢুকে শট মারেন। কিন্তু এত জোরে শট ছিল, বল বার উঁচিয়ে চলে যায়। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয়। অনেক চেষ্টা করেও তারপর আর তারা স্পেনকে আক্রমণ করতে পারেননি। কারণ দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই স্পেন একেবারে আগ্রাসী ভূমিকায় চলে যায়। স্পেনের কোচ ফুয়েন্তে জানতেন ফ্রান্সকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় আটকানো কঠিন। ৫৭ মিনিটের মাথায় ৩৮ বছর বয়সী নাভাসকে স্পেন তুলে নেয়। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এর জায়গায় যান লাপোতে। প্রথমার্ধে ইউরো কাপের এই সেমিফাইনালে ৪ মিনিটের ঝড়ে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। ফ্রান্সকে স্পেন যে দ্বিতীয় ধাক্কা দেয় তা হল নাভাসের কাছ থেকে বল পান অলমো। তারপরেই তিনি শট মারেন। বল বাঁচানোর চেষ্টা করেন ফ্রান্সের কুন্ডে। কিন্তু বল তার পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। আর এই আত্মঘাতী গোল দিলেও অলমোর নামেই সেই গোল দেওয়া হয়ে যায়। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ফ্রান্স। ফলে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যায় তারা। ফাইনালে উঠে যায় স্পেন। আর তার সঙ্গে স্পেনের দুর্দান্ত প্রতিভা ১৬ বছর বয়সি লেমিনে ইয়ামাল। তিনি যে ফুটবলে সাবালক হয়ে গিয়েছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এদিন।