Medinipur: ‘সাহায্য দূরের কথা বিধায়ক ফোন করে একটা শুভেচ্ছাও জানাননি’, অলিম্পিকে ডাক পেয়েও অভিমানী আভা

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

দেবব্রত মণ্ডল : মেদিনীপুরের (Medinipur) নারায়ণগড়। গ্রাম বাংলার আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে তেমন কোন পার্থক্য নেই এই গ্রামের। নিস্তরঙ্গ জীবন। সবে শুরু হয়েছে বর্ষা। মনকেমন করা বিকেল আর ইলশে গুড়ি বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা নামছে নারায়ণগড়ে। মোড়ের মাথায় চায়ের দোকানে জমে উঠেছে দৈনন্দিন আড্ডা। লোকসভা ভোট থেকে মোদির মন কি বাত সব খবরের সন্ধান মিলবে এই আড্ডায়। এই সময়টুকুর জন্য গ্রাম – বাংলার নিস্তরঙ্গ জীবনে আসে খবরের ঢেউ। শচীন নাকি বিরাট তর্কে চায়ের কাপে তুফান ওঠে। তবে আজ আর শচিন কিংবা বিরাট নয়। আজ আলোচনার বিষয় আভা। লক্ষ্মীর মেয়েটা গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ধীমান মাস্টার বলছিল অলিম্পিকে খেলবে তাদের গাঁয়ের মেয়ে। প্যারিস অলিম্পিক। প্যারিস – কত দূর। লক্ষী তো দিনমজুরি করে, সংসার চালাতে মাদুরও বোনে। মেয়ে এবার বাপের দুঃখ ঘোচাবে।

আভা খাটুয়া। মেদিনীপুরের আভা এবার শটপাট বিভাগে প্যারিস অলিম্পিকে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছেন। অথচ সেই আভার গলায় এখন ছত্রে ছত্রে অভিমান। বললেন, ‘জানেন আমি অলিম্পিকে ডাক পাওয়ার পরেও আমাদের বিধায়ক একবারের জন্য ফোন করে একটা শুভেচ্ছা জানাননি। অন্যান্য সাহায্য তো দূরের কথা।’ আভা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন। অথচ এই আভাকেই একসময় রাজ্য ছাড়তে হয়েছিল অভাবের তাড়নায়। বাংলার মেয়ে হয়েও বাংলায় খেলার সুযোগ – সুবিধা থেকে বঞ্চিত তিনি। খেলেছেন মহারাষ্ট্রের হয়ে। বাংলায় কী খেলাধুলার পরিকাঠামোর খুব অভাব? উত্তরে আভার গলায় শুধুই হতাশা। বললেন – ‘বাংলায় ঠিকঠাক প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড বলতে শুধু যুবভারতী। তাও বেশিরভাগ সময় ফুটবল ছাড়া অন্যকিছু হয় না ওখানে। আমাদের অনেকসময় ঢুকতেই দেয় না।’

আভার বাবা লক্ষ্মীকান্ত দিনমজুর। মেয়ে প্যারিস অলিম্পিকে সুযোগ পেয়েছে, দেশকে পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। লক্ষ্মীকান্ত হিসেব কষেন বদলে মেয়ে কী পেয়েছে। আবাস যোজনায় দরখাস্ত করার পরেও ঘর মেলেনি। আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেই স্বপ্ন দেখতে শিখেছে মেয়ে, বুঝেছে সব প্রতিকূলতা জয় করে স্বপ্ন দেখার মধ্যেই আসল আনন্দ। প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে জিতে যাওয়ার মধ্যে একরাশ ভালোলাগা।

বাবা দিনমজুর, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই সেভাবে তারপরেও আভা স্বপ্ন দেখেন পদক জিতে আসার। আভা বলে চলেন – ‘ আমি চাই খেলোয়াড় তৈরি করতে রাজ্য সরকার যদি আমায় কোনভাবে সেই সুযোগ করে দেয় তাহলে নিশ্চয় চেষ্টা করবো।’ কিন্তু প্র্যাকটিসের খরচা সেসব সামলান কীভাবে? আভা বললেন, ‘ওর মধ্যেই যতটুকু সম্ভব করতে হয়। তবে আমরা যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি সরকার যদি তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে তাহলে ভাল হয়। নাহলে অনেকে হয়ত আর্থিক অভাবে খেলার স্বপ্ন দেখতেই ভুলে যাবে।’

দিন আনা দিন খাওয়ায় সংসারে আভাদের মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গরা জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আলো হয়ে পথ দেখায় বাকিদের, কেউ আবার অচিরেই নিভে যায়, হারিয়ে যায় গহীন অন্ধকারে। আভাদের জীবন জুড়ে লড়াই। তারা একটা কথা বলে চলে বারবার – ‘ফাইট আভা ফাইট’।