বিচারের অপেক্ষায় তিলোত্তমা! কিন্তু আরও কতদিন

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

শুভব্রত রাণা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য সহ গোটা দেশ। জুনিয়র চিকিৎসকেরা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মবিরতি। অন্যদিকে বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন অভিনয়-সংগীত জগতের সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ সকলে। আন্দোলনে নেমেছে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষা দফতরের তরফে স্কুলের উদ্দেশ্যে জারি হচ্ছে সার্কুলার, যাচ্ছে শোকজ নোটিশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হচ্ছে “We want JUSTICE” স্বর। কিন্তু আর কতদিন? আরও কতদিন অপেক্ষা থাকবে তিলোত্তমা বিচারের আশায়!

আরও পড়ুনঃ ‘আমার বোনের বিচার চাই’-তিলোত্তমার বিচার চেয়ে আন্দোলনের শরিক মাটিকুমড়ার উমারাও

৯ আগস্ট সকাল! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হল কর্তব্যরত মহিলা পিজি ট্রেনি চিকিৎসকের রক্তাক্ত মৃতদেহ। ক্রমে জানা গেল ধর্ষণের পর নৃশংস ভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। ঘটনার অভিঘাতে স্তম্ভিত হল রাজ্য সহ গোটা দেশ। আরজি কর সহ রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছড়িয়ে পড়লো আন্দোলন। কর্মবিরতির ডাক দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ঘটনার তদন্তে নামলো কলকাতা পুলিশ। ১৪ আগস্ট রাত দখলের ডাক দিল মেয়েরা। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের স্বাধীনতা দিবসের রাত মুখর হল মহিলাদের “we want Justice” ধ্বনিতে। তারপর একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সংবাদমাধ্যম ও সোস্যালমিডিয়ায় ভাইরাল একাধিক ভয়েস অডিও। উঠলো গণধর্ষণের অভিযোগ। যদিও তা প্রমাণিত নয়। অভিযোগের আঙুল উঠলো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের দিকে। সঙ্গে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। চাপের মুখে পদ ছাড়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হলেন সন্দীপ। কিন্তু ডাক্তারি পড়ুয়ারা অনড়। কাজে যোগ দিতে পারলেন না সন্দীপ। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ছুটিতে প্রাক্তন অধ্যক্ষ। ঘটনার পরেই কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে একজন সিভিক ভলেন্টিয়াররাকে। ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই অভিযুক্তের হেফাজত ও ঘটনার তদন্তভার দুই এখন সিবিআই এর কাঁধে। মামলাও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। কিন্তু আদৌ কি বিচার পাবে তিলোত্তমা! পেলেও কতদিনের অপেক্ষা?

তিলোত্তমা মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ও কলকাতা পুলিশের কাজে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে খোদ সিবিআই এর তরফে আইনজীবী সলিসিটার জেনারেল মেহতা দাবি করেছেন, কলকাতা পুলিশের এক্তিয়ারে তদন্ত থাকাকালীন অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। যদিও রাজ্য তা অস্বীকার করেছে, তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্নের কারণ সুপ্রিম কোর্ট। ঘটনা পরম্পরা নিয়ে বিচারপতিদের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য।

আরও পড়ুনঃ মহিলা পুলিশকর্মীদের ১ বছরের ছুটি, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

খটকার উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “একটা জিনিস নিয়ে খটকা লাগছে। সকাল ১০:১০ মিনিট নাগাদ টালা থানা জেনারেল ডায়েরি করল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল সিল করল পুলিশ? ততক্ষণ সেখানে কী হচ্ছিল?” বিচারপতি পারদিওয়ালার প্রশ্নের জবাবে রাজ্য জানায়, ৯ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের মধ্যে ময়নাতদন্ত হয়েছিল। এরপরেই বিচারপতি পারদিওয়ালা প্রশ্ন করেন, ময়নাতদন্তের পরেও রাত ১১:৩০ অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হল কীভাবে? তদন্তে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপারের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতিও মামলা দায়ের করার সময় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কড়া মন্তব্য করেন বিচারপতি পারদিওয়ালা, “আমি আমার ৩০ বছরের আইনের কেরিয়ারে এমন ভাবে তদন্ত হতে দেখিনি। আপনি যদি ময়নাতদন্তের আগে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন, তবে কিসের ভিত্তিতে করলেন? যদি ময়নাতদন্তের পরে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করে থাকেন, তবে তখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা কেন দায়ের করলেন? তখন তো মৃত্যুর কারণ জেনেই গিয়েছেন!”

এখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত! ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে তদন্তভার হাতে পেয়েছে সিবিআই। তাদের দাবি অনুযায়ী যদি সত্যিই “অনেককিছু বদলে গিয়ে” থাকে, তবে আদৌ কি এই মামলার কিনারা হবে? আদৌ কি ধরা পড়বে ঘটনার দোষীরা? ধরা পড়া সিভিক ভলেন্টিয়ারই কী একমাত্র অভিযুক্ত? নাকী আরও কেউ আছে যে রহস্যের মেঘনাদ! সর্বভারতীয় সংস্থা সিবিআই এর কর্মকুশলতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু একথাও সত্য বিগত ১০ বছরে বহু হাইপ্রোফাইল কেসের তদন্তভার গিয়েছে সিবিআই-এর হাতে। কিন্তু সম্পূর্ণ তদন্ত অধিকাংশ মামলারই শেষ হয়নি। একাধিক চার্জশিট জমা পড়েছে, কিন্তু অন্তিম চার্জশিট পেশ অনেক মামলারই এখনও বাকি। এই পরিস্থিতিতে বিচারের আকাক্ষা ও আন্দোলনের তীব্রতার মাঝেই জাগছে প্রশ্ন, যেগুলি মোটেই অমূলক নয়। তিলোত্তমা কী বিচার পাবেন? সিবিআই কী পারবে অপরাধীকে বা অপরাধীদের দোষ প্রমাণ করতে? রাজ্য তথা দেশের মহিলাদের বিচার দাবি কী ন্যায়ালয়ের চৌকাঠে আইনত মর্যাদায় আসীন হবে? নাকি আরও এক দীর্ঘায়িত মামলা হিসাবেই একাধিক মামলার শুনানির তলায় চাপা পড়বে সেটি! প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তরগুলি অজানা। উত্তরের প্রত্যাশায় ক্ষত বুকে নিয়ে আর কত দিনের অপেক্ষা হে স্বাধীন ভারতের আধুনিক সভ্যতা?