মধুসূদন মাহাতো~ডকা টাইড়, ২৮টি পরিবারের আদিম আদিবাসীদের একটি গ্রাম। গ্রামে শুধু খাড়িয়া(শবর)দের বাস। লোকসংখ্যা ১৭৩, মৌজা- পুঁড়রু, গ্রাম পঞ্চায়েত- বামনী, জেলা- পুরুলিয়া। গ্রামে কোনও দিক থেকেই যোগাযোগের কোনও রাস্তা নেই। গ্রামটি যেন বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ। জঙ্গলমহলের অন্যান্য খাড়িয়া(শবর)দের মতোই এরাও ভীষণ গরিব। বাম আমলের সামান্য পাট্টা ছাড়া, জমি জায়গা নেই বললেই চলে। পাশাপাশি এলাকায় কোনও কাজ নেই। বনও এখন আর নেই। খরা এলাকায় যদি বর্ষা হয় তাহলে দিন কয়েকের কাজ জোটে। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্তর জরাজীর্ণ গ্রামগুলির মতোই এটিও একটি গ্রাম।
আরও পড়ুনঃ বাংলা ও বাঙালির ভোট উৎ-শব
কিন্তু এই গ্রামটি এখন পুরুলিয়া জেলায় নজর কেড়েছে। এমনকি জেলার বাইরেও এই গ্রামের পরিচিতি ঘটে গেছে। এই গ্রামেই রয়েছে একটি বিখ্যাত ছৌ নৃত্য দল। ২৮ জনের ছৌ নৃত্য দলটি শুধু খাড়িয়া(শবর) মেয়েরাই পরিচালনা করে। গীতামণি শবর এই দলের ওস্তাদ। কার্তিক, কৃষ্ণ, রাবণ, কিরাত এবং চুয়াড় বিদ্রোহের নায়কদের ভূমিকায় গীতামণি খুব ভালো নৃত্য করে। পূর্ণিমা শবর, সুলোচনা শবররা ভালো গান গায়। সব মিলিয়ে একটি জমাটি মহিলা ছৌ নৃত্য দল। শুধু মাত্র গ্রীষ্মকালটা এদের একরকম টানা প্রোগ্রাম থাকে। বাকি সময়ে প্রায় নেই। জেলা এবং জেলার বাইরেও এদের ডাক পড়ে। কলকাতাতেও এরা বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম করে এসেছে। আর তারই ফলে এই অখ্যাত গ্রামটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
কিন্তু সারারাত জেগে নৃত্য করার পরে এই মেয়েগুলি কত করে ভাগ পায়? গীতারানি জানালেন এখন আড়াইশো তিনশো টাকা পাওয়া যায়। আর এক নিত্য শিল্পী শেফালী শবর জানালেন কিছু না পাওয়ার যুগে এটাই আমাদের কম কিসে? বোঝা গেল, আকাশ চুম্বি প্রত্যাশা এরা করে না। নাহ্, এরা কেউ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পী ভাতা পায় না। কেউ ব্যবস্থাও করে দেয় না। কিন্তু শাসককে এরা ভোট দিয়ে যায় প্রাণ খুলেই। শাসকের পক্ষে এরা গানও গেয়ে যায়। কিন্তু জীবন এদের পাল্টায় না।
বহুদিন থেকেই এদের কাছে পৌঁছানোর ইচ্ছা। অবশেষে এলাম, দেখলাম, কথা বললাম। শিহরিতও হলাম আবার মুগ্ধও হলাম।