শুভব্রত রানা : রাতের আঁধারে আরজি কর (RG Kar) মেডিক্যাল কলেজের অন্ধকার ঘরে ‘তিলোত্তমা’ ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরজি কর (RG Kar) মেডিক্যাল কলেজে সেই রাতে একাধিক নারী মাংস লোলুপ হিংস্র জীব তাঁকে ছিঁড়ে খেয়েছে। ‘তিলোত্তমা’ কোন এক ইলেকট্রিক চুল্লিতে ভষ্ম হয়েছেন। পড়ে রয়েছে তাঁর ডাক্তারির স্বপ্ন, পিজির নোটস, অর্ধেক পড়া বই, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, মা-বাবা, অসংখ্য স্মৃতি আর সেই স্মৃতি আঁকড়ে থাকা এক অসহায় প্রেমিক! আমার সেই প্রেমিকের কথা বড্ড মনে হচ্ছে। বড় ইচ্ছা হচ্ছে তার পাশে বসতে, তার পিঠে হাত রাখতে, তার নিঃশব্দ কান্নার সাক্ষী হতে।
যখন প্রেমিক গভীর ভাবে প্রেম করে, প্রেমিকা তার সত্ত্বার অর্ধেক হয়ে ওঠে। তিলোত্তমা ধর্ষিতা হয়ে মারা গেছে। তার প্রেমিক কি বেঁচে আছে? না বেঁচে নেই। কারণ তিলোত্তমার সঙ্গেই ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সত্ত্বা, নৃশংস ভাবে খুন হয়েছে তার অর্ধেক সত্ত্বা। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুরা জানাচ্ছেন, তিলোত্তমার সমস্ত শরীর জুড়ে নাকি আঘাতের চিহ্ন, আঁচড় কামড়ের দাগ! এমনকি সেই দাগ স্পষ্ট গলায় ও ঠোঁটেও। সে দাগ হিংস্র, জান্তব, পাশবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ। প্রেমিক প্রেমিকারা জানেন, গভীর আদরেও দাগ পড়ে ঐ গলাতেই। প্রেমিকের কোমল কামড়ে প্রেমিকার গলা জুড়ে কালচে লাল গোলাপি দাগ ফুটে ওঠে। হয়তো ‘তিলোত্তমা’র গলাতেও একদিন সেই দাগ আল্পনা কেটেছিল। ঐ যে পাশবিক আঘাতে ‘তিলোত্তমা’র ক্ষতবিক্ষত ঠোঁট! ‘তিলোত্তমা’র প্রেমিক হয়তো গভীর আবেশে সেই ঠোঁটে নিজের ভালোবাসা জানান দিতো। ‘তিলোত্তমা’র যে শরীর জান্তব আক্রোশে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, সেটিকেই হয়তো পরম আদরে যত্নে ভরিয়ে রাখতো তার আবিষ্ট প্রেমিক!
আচ্ছা! সেই প্রেমিক এখন কি করছে? যে খুব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, নাকি সে সব হারিয়ে এখন স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার যন্ত্রণা ও কান্নার উপলব্ধি কি সে হারাচ্ছে ধীরে ধীরে! পুরুষ হয়েও অজস্র নারীর মতোই সেও কি রাত বাড়লে আতঙ্কিত হচ্ছে! রাতের বীভৎস বিভীষিকা সে আর ভুলবে না। রাত হলেই তার চোখের সামনে নৃত্য করবে অব্যক্ত আবেগ, রাগ, আতঙ্ক যন্ত্রণা৷ গভীর রাতে যার গলার আওয়াজে সে ঘুমাতে যেত, যার ফৌনিক আদরে সে শান্ত হত, সেই নারীর আওয়াজ শরীরী উপস্থিতি আর বাস্তব নয়! তার প্রেমিক জীবন অর্ধেক সমাপ্ত, বাকিটা অসম্পূর্ণ, ঠিক তার প্রেমিকাকে দেওয়া অর্ধেক পড়া বইটির মতো!