ভারতবর্ষ অতীতকাল থেকেই পরিচিত কৃষিপ্রধান দেশ হিসাবে আর তাই তো ভারতের প্রতিটা প্রদেশের মানুষই সেই বহু যুগ ধরে চেয়ে এসেছে খেত ভরা ধান, গোলা ভরা চাল আর দু’বেলা ভাতের সুঘ্রান। ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত কেরালা রাজ্যের ‘ওনাম’ উৎসবও (Onam Festival) পালিত হয় সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই। ‘ওনাম’ তাই ফসলের উৎসব।
প্রচলিত মত অনুসারে, ‘ওনাম’ উৎসবের মাধ্যমে রাজা মহাবলীর আত্মাকে পৃথিবীতে আহ্বান জানানো হয়। রাজা মহাবলী একজন রাক্ষস বা অসুর হিসাবে চিহ্নিত হলেও কেরালাবাসীরা মনে করেন, তার রাজত্বকালেই কেরালা সুখ-সমৃদ্ধির শিখরে অবস্থান করতো। ‘ওনাম’-এর চতুর্থদিনেই উদযাপিত হয় ‘পুলিকালী’। মালয়ালম ভাষায়, ‘পুলি’ কথার অর্থ হল বাঘ এবং ‘কালী’ শব্দের অর্থ হল খেলা। কেরালার ত্রিসুর জেলায় এই ‘পুলিকালী’ আবার ‘কাদুভাকালি’ নামেও পরিচিত। অনেকে মনে করেন, মহাবলীর মত এক বিক্রমশালী রাজার প্রতীক হিসাবেই বাঘের আগমন আবার অনেকের মতে, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধনই এই উৎসবের মূল উপজীব্য।
‘পুলিকালী’ উৎসবের সকালবেলা থেকেই শিল্পীরা নিজেদের শরীরে লাল, কালো, হলুদ রঙের সাহায্যে বাঘের ছবি আঁকার কাজ শুরু করে থাকেন এবং বেলা বাড়তেই তারা রাস্তায় মিছিল করে, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বাঘ বেশে নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল, স্থূল চেহারা বিশিষ্ট পুরুষদের নৃত্য প্রদর্শনী। নবাগত শিল্পীরা আবার এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনমানুষের সামনে নিজেদের শিল্প প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে থাকেন বলে, তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘পুলিকালী’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
আরও পড়ুনঃ নেই কাজ, নেই উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা; তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এপিডেমিকের রূপ নিচ্ছে অনিশ্চয়তা?
আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে রামবর্মা নামক রাজার সময় থেকেই এই নৃত্যের প্রচলন ঘটে। কথিত আছে, তিনি নাকি ‘ওনাম’ উৎসবের সঙ্গে বন্যশক্তির আরাধনার প্রতীক হিসাবে এই বিশেষ নৃত্যের প্রচলন ঘটান এবং পরবর্তীকালে মুসলিম ব্রিটিশ প্রজাদের দ্বারাও এই নৃত্য গৃহীত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ শিল্পীরা নিজেদের শরীরে রঙের ব্যবহার করা অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে সেই স্থান কেড়েছে বাঘের মুখোশ।