CPM: জোট নাকি সন্ত্রাস? সিপিএমের বিপর্যয়ের নেপথ্যে কোন কারণ?

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

দেবব্রত মণ্ডল~সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটেও শূন্যের গেরো কাটাতে পারেনি সিপিএম(CPM)। ভোটের আগে গোটা রাজ্যের মানুষ আশা করেছিলেন বাম – কংগ্রেস জোট রাজ্যে বেশকিছু আসনে জয়লাভ করবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের এক্সিট পোলেও দেখা যাচ্ছিল বাম – কংগ্রেস জোট দুই থেকে তিনটি আসন পাবে। কিন্তু ভোটের পর দেখা গেল সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। বাম – কংগ্রেস জোট গোটা রাজ্যে পেয়েছে মাত্র ১ টি আসন। কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী মালদা দক্ষিণ আসন থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়লাভ করেছেন। মুর্শিদাবাদ এবং বহরমপুর নিয়ে বাম কর্মী – সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার হলেও দুটি আসনেই মহম্মদ সেলিম এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী শোচনীয়ভাবে পর্যদুস্ত হয়েছেন। বামেদের তরুণ তুর্কী সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধরও সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি। দুজনেই যাদবপুর এবং শ্রীরামপুর থেকে তৃতীয় হয়েছেন। দমদমে সৌগত রায়ের কাছে হেরেছেন সুজন চক্রবর্তীও। রাজ্যে এই দুর্দশার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মিটিং – মিছিলে জনজোয়ার, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাল ঝান্ডার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির পরেও ভোটবাক্সতে তার প্রতিফলন পড়ছে না কেন? এই নিয়ে বিচার – বিশ্লেষণের জন্য আগামী ১৪ জুন বৈঠক ডেকেছে বাম নেতৃত্ব। সেখানেই লোকসভা ভোটে ব্যর্থতার কারণ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ মানুষের সেবকরা নিশ্চয়ই রক্ত ঝরাবেন না

তবে বাম শরিক দলগুলোর অনেকেই মনে করছে বামেদের এই হতাশাজনক ফলাফলের কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোটের সিদ্ধান্ত। ফরওয়ার্ড ব্লক, আর এস পির মতো দল সরাসরি আঙুল তুলেছে বাম – কংগ্রেস জোটের দিকে। তাদের বক্তব্য এই জোটের আগে সিপিএম নেতৃত্ব কোনভাবেই নীচুতলার কর্মীদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করেনি। একসময় যে কংগ্রেসের হাতে দলের কর্মীরা প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হয়েছেন তাদের সঙ্গেই জোটের ফলে দলের অনেক সক্রিয় কর্মী বসে গিয়েছেন। আবার একই কারণে বিজেপিতে চলে গেছে ভোটের একটা বড় অংশ।

তবে শরিক দলগুলি যখন লোকসভা ভোটে খারাপ ফলাফলের জন্য বাম – কংগ্রেস জোটের দিকে আঙুল তুলছে তখন কিন্তু সিপিএম এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আগেই দাবি করেছিলেন দলের কর্মীরা বাম – কংগ্রেস জোটের সঙ্গে আছেন। বাম নেতা অমিয় পাত্রের আবার দাবি, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটই লোকসভা ভোটের ফলাফলের জন্য দায়ী কিনা তা বলার সময় আসেনি। তিনি বললেন – ‘ দলীয় নেতৃত্ব যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন নিশ্চয় তার পিছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। আর লোকসভা ভোটের ফলাফলকে বিশ্লেষণ করতে হবে সময় নিয়ে। বুঝতে হবে মানুষ কেন আমাদের বেছে নিচ্ছেন না। শুধু জোটের দিকে আঙুল তুলে লাভ নেই।’

তবে বামেদের অন্যান্য শরিক দলগুলি যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দিকে আঙুল তুলেছেন তখন এস ইউ সি আই কিন্তু বামেদের এই ফলের জন্য দায়ী করছে ৩৪ বছরের শাসনকালে সিপিএমের সন্ত্রাসকে। তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, ৩৪ বছরে সিপিএম সন্ত্রাসকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে মানুষ কোনভাবেই তাদের ভরসা করতে রাজি নয়। এস ইউ সি আই জেলা কমিটির সদস্য এবং লোকসভা ভোটে উত্তর কলকাতার প্রার্থী বিপ্লব চন্দ্র বললেন, ‘ শুধু সিপিএম – কংগ্রেস জোট নয়, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর সহ গোটা রাজ্যে সিপিএম যে সন্ত্রাস একসময় চালিয়েছে তা মানুষ এখনও ভোলেনি। আমরা যে সময় কলেজে পড়েছি, দেখেছি এস এফ আই- এর দাদারা আমরা কখন কী খাব ঠিক করে দিচ্ছে। জুনিয়র ছেলেদের খাবার তাদের মুখের সামনে থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তেমনই গোটা রাজ্যে সিপিএমের ক্যাডাররা যে অত্যাচার চালিয়েছে তার ফল ভোগ করছে তারা।’

এরই পাশাপাশি শরিক দলগুলো মনে করছে বামেদের নীচুতলায় সংগঠন বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। সেই সঙ্গে তৃণমূল যেভাবে বিজেপি বিরোধিতায় নেমেছে সেই বিরোধিতা বামেরা দেখাতে পারেনি। ভোটের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে।

তৃণমূল অবশ্য বাম – কংগ্রেস জোটকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূল মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, ‘গোটা রাজ্যে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলেছে তাতেই ঘায়েল হয়েছে বিজেপি এবং সিপিএম – কংগ্রেস।’ এরইসঙ্গে জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘জনমানসে বামপন্থীরা এখন অপ্রাসঙ্গিক।’ ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের উন্নয়নের দাবিকে অস্বীকার করতে পারলেন না। বললেন, ‘সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা যে মানুষের মনে প্রভাব ফেলেছে তাতে সন্দেহ নেই।’

সব মিলিয়ে বামেদের শরিক দলগুলিও সিপিএম নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ। তারা আঙুল তুলছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে কি সিপিএম নতুন করে ভাববে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রসঙ্গে?