বিক্রম ব্যানার্জী: কথায় বলে, বয়স সংখ্যা মাত্র! বৃদ্ধ মনে প্রেম জেগে উঠবে না এ কথা কোথাও লেখা আছে? জীবনের দৌঁড়ে তাঁরা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। একজনের বয়স, 102, অপরজনের 100। দুজনেই পৌঁছেছেন জীবনসায়াহ্নে। শরীরে নানান রোগের সহযোগে বাসা বেঁধেছে বার্ধক্য। তবে শরীরের বয়স শতাধিক হলেও মন কিন্তু যৌবনেরই প্রতিনিধি। তাই বয়সের তোয়াক্কা না করে জীবনের বাকি পথচলাটুকু সহজ করতে একে অপরের জীবনসঙ্গী হয়ে উঠেছেন আমেরিকার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা মারজোরি ফিটম্যান(102 বছর) এবং বার্নি লিটম্যান (100 বছর)। সেই সাথে একে অপরের হাত ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নবদম্পতি(OLDEST NEWLYWEDS) হিসেবে বিশ্ব রেকর্ডেও জায়গা করেছেন তাঁরা।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্য মারফত খবর, মারজোরি ও বার্নি দুজনেই তাদের পথ চলার সঙ্গী(স্বামী-স্ত্রী) হারিয়েছিলেন। আগেই মারজোরিকে আলভিদা জানিয়ে চলে গিয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ স্বামী। একইভাবে বার্নির বয়সের কাছে হার মেনেছে তাঁর স্ত্রীর প্রাণশক্তি। কাছের মানুষদের হারিয়ে দুজনেরই ঠাই হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রমে। তবে কোনদিনও ভাবতে পারেননি বৃদ্ধদের ওই আবাসস্থলই একদিন নতুন জীবন সঙ্গী খুঁজে দেবে। তাও আবার জীবনের সেই পর্বে দাঁড়িয়ে যেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সূত্র বলছে, গত 19 মে 9 বছরের সম্পর্ক হারানোর পর একে অপরের গলায় মালা পরিয়েছেন মারজোরি ও বার্নি। শুদ্ধ ভাষায় যাকে বলে, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। আর এই কীর্তি তাঁদের বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক দম্পতির খেতাব অর্জনে সাহায্য করেছে। বর্তমানে দুজনের সম্মিলিত বয়স 202 বছর 271 দিন।
বৃদ্ধাশ্রমের নিচের তলায় থাকতেন মারজোরি। সেখানেই পাশের ঘরে জায়গা হয়েছিল বার্নির। জানা যায়, বৃদ্ধাশ্রমের এক অনুষ্ঠানে আলাপ হয় দুজনের। এরপরই সেই সাময়িক পরিচিতি পূর্ণতা পায় বন্ধুত্বে, তারপর খোশ মেজাজে দীর্ঘ দিন যাপন এবং সবশেষে বিয়ে। বার্নি ও মারজোরি কখনই ভাবতে পারেননি একপ্রকার মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে এভাবেও প্রেমে পড়া যায়, কাউকে ভালবাসা যায়, সর্বোপরি 100 ঊর্ধ্ব হয়েও নতুন জীবন শুরু করা যায়। বলা বাহুল্য, মারজোরি এবং বার্নি উভয়ই পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। যদিও পড়ুয়া থাকাকালীন তাঁরা কেউই একে অপরকে চিনতেন না, কথাও হয়নি কখনও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন বার্নি। তাঁর পেশাও ছিল প্রকৌশলী। অন্যদিকে মারজোরি নিজের পড়ুয়া জীবন শেষ করে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন।
প্রসঙ্গত, বার্নি ও মারজোরি দুজনের পরিবারই ভেবেছিল জীবনের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে তাঁরা হয়তো আর বিয়ে করার সাহস দেখাবে না। তবে কথায় আছে, যা হওয়ার তা ঠিকই হবে!.. বার্নির বিবাহ প্রসঙ্গে নাতনি সারাহ বলেন, ‘এই দম্পতির বিয়ের খবরে গোটা পরিবারই রোমাঞ্চিত। তারা একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে সত্যিই ভাগ্যবান। দুজনেই দুজনের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল, বিশেষত করোনা মহামারির সময় দুজনেই দুজনের পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।’ সারাহর আরও সংযোজন, ‘তাঁদের যা বয়স, সকলে ভেবেছিল তাঁরা হয়তো আর কখনই বিয়ে করবেন না। তাঁরা বিয়ে করেছেন এটা সত্যিই অবাক করা বিষয়।’