বিক্রম ব্যানার্জী: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণের বিচারে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের সিংহাসন দখলের দৌড়ে ভেস্তে গেছে কমলার সমস্ত প্রচার ও পরিকল্পনা। কিন্তু কেন আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমেরিকার মানুষের মন জয় করতে পারলেন না কমলা হ্যারিস? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ 3 কারণে প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে কমলার(Kamala Harris)। কী সেগুলি? রইল বিস্তারিত।
অনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক অস্থিরতা
ডেমোক্রেটিক পার্টির কৌশল নির্ধারণকারি জেমস কারভিল 1992 সালে বিল ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার কারণ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মূলত অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণেই হারতে হয়েছে কমলা হ্যারিসকে। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সরকার বিগত বছরগুলিতে বিপুল মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে পারেননি। জনগণের দৈনন্দিন জীবন যাপনে দ্রব্যমূল্য ও গৃহস্থলীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণেই হতাশ হয়েছিলেন ভোটাররা। কাজেই আনাজসহ বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে নারায়ণ দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি সমস্যা হয়ে উঠেছিল জনগণের কাছে। আর সেই কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিকল্প হিসেবে ভেবে নিয়েছেন তারা।
প্রচারে বিলম্ব
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলার পিছিয়ে থাকার কারণ প্রসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে দেরি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, 82 বছর বয়সী বাইডেন চলতি বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলে তার অতিরিক্ত বয়সের কারণে নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল তাকে। ফলত শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে না লড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ালে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান কমলা হ্যারিস। এরপরই তাকে মাত্র 3 মাসের মধ্যে প্রচার সারতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কমলার পরাজয়ের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী জো বাইডেন। অতিরিক্ত বয়স নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে লড়ার চেষ্টা করাই উচিত হয়নি তার। প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিলে কমলা নির্বাচনী প্রচারের জন্য আরও বেশি সময় পেতেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মহিলা দল ঘোষণা করল আয়ারল্যান্ড
জনসমর্থনে বদল
প্রাথমিক বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস 40 শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট ও 80 শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোট পেয়েছেন। একই সাথে হিম্পানিক ও এশিয়দের মধ্যে মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন কমলা। অন্যদিকে একই সমীক্ষা জানাগিয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাননি ট্রাম্প। যদিও বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে তার ভোটের অঙ্ক ছিল সবথেকে বেশি। একই সঙ্গে হিম্পানিকদের মধ্যেও বিপুল ভোটে এগিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে 5 নভেম্বরের ফলাফল সমস্ত সমীক্ষাকে হার মানিয়েছে। বুথ ফেরত সমীক্ষা গুলিকে ভুল প্রমাণ করে ফলাফলে উঠে এসেছে ট্রাম্পের নিরঙ্কুশ জয়। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্তো সুরো জানিয়েছেন, আমেরিকার ধর্মপ্রচারক, কলেজ পড়ুয়া, কৃষক শ্রেণীর মানুষ, চাকুরিরত ব্যক্তি থেকে শুরু করে মহিলাদের মধ্যেও ট্রাম্পের প্রতি যথেষ্ট দৃঢ়তা লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে তিনি বারংবার নারীদের গর্ভপাতের বিরুদ্ধে কথা বলতেন।