বিক্রম ব্যানার্জী: মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা। শিলচর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা চলাকালীন দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল আসামে। সেই সূত্রেই আলাপ হয় স্থানীয় এক যুবকের সাথে। সেখান থেকেই প্রেমের শুরু, তারপর বিয়ে। শেষ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা দেশে ফিরে গেলেও বিয়ের পর ভারতেই থেকে যান ওই বাংলাদেশী নারী। তবে ভারতীয় পরিবারের বৌ হয়ে এলেও অপ্রাপ্তি ছিল নাগরিকত্ব(Citizenship)। তা পূরণ করতেই 2019 সালে পাস হওয়া শরণার্থী নাগরিকত্ব আইন মেনে আবেদন করে ফেলেন তিনি।
আরও পড়ুন: iCloud নিয়ে Apple-এর বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ আনল ‘which?’
স্বামীর সাথে পরিচয়ের সূত্রপাত হাসপাতাল থেকেই। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওই অল্প বয়সী মহিলা। একই দিনে বাবার শারীরিক চিকিৎসার জন্য শিলচরে এসেছিলেন আসামের বদরপর শহরের এক যুবক। মেয়েটির মায়ের চিকিৎসায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ওই যুবক। এরপরই সেখান থেকে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম। বেশ কিছুদিন দুজন একাকী সময় কাটানোর পর সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করবেন। এরপর দুজনেই তাদের প্রেমের কথা জানান পরিবারে।
অবশেষে দুই হিন্দু পরিবারের সম্মতি মেলায় ধুমধাম করে আয়োজন শুরু হয় বিয়ের। বিয়ের পর্ব মিটে গেলে মেয়ের বাবা-মা ফিরে যান বাংলাদেশে। এদিকে এক বছরের মধ্যেই মহিলার কল আলো করে জন্ম নেয় নতুন সদস্য। তারপর থেকে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার করছিলেন বাংলাদেশের ওই মহিলা। তবে বেশ কয়েক বছর পর মাথায় আসে ভারতে বসবাস করলেও পাওয়া হয়নি নাগরিকত্ব। এরই মধ্যে 2019 সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পাশ করে কেন্দ্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার।
যাতে উল্লেখ ছিল, ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ তথা বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ আফগানিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান জৈন সহ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যেকেউ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই খবর শোনা মাত্রই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন বসেন ওই বাংলাদেশী মহিলা। কাগজে-কলমে ভারতের নাগরিক হতে পারবেন এই আনন্দে দিন গুণ ছিলেন তিনি। তবে সেই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেন ওই নারী।
কেননা, স্থানীয় আইনজীবীদের তরফে জানানো হয়েছিল সিএএ-র মাধ্যমে শুধু তারাই নাগরিকত্ব পাবেন যারা নিজের দেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে এসেছেন। সেই সাথে 2014 সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশকারীরাই নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত। আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব ডয়চে জানান, বদরপুরের ওই বাংলাদেশি গৃহবধূ করিমগঞ্জের কাছাড় জেলার বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন।
যেই জেলাটির সাথে বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ থেকে বাদ দিয়ে জুড়ে দিয়েছিল ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। কাজেই নিজের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাহার করে পুনরায় আবেদন করেন ওই মহিলা। আইনজীবীদের তরফে জানানো হয়েছে তার নাগরিকত্ব পেতে এখন আর কোনও রকম বাধা নেই। বর্তমানে সেই প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই ওই বাংলাদেশি নারীকে ভারতের নাগরিকত্ব দেবে সরকার।