রাজীব ঘোষ: দেশ জুড়ে বিভিন্ন সময়ে সচেতনতার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে ভয়ানক চিত্র। যা ভারতবর্ষের বাসিন্দাদের পক্ষে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার বিরাট কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে এইডস (AIDS) যা শুধুমাত্র ত্রিপুরার ক্ষেত্রে নয়, দেশবাসীর কাছেও মারাত্মক চিন্তার কারণ। ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল ব্যুরোর তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে সেই সমীক্ষায় যে চিত্রটি উঠে এসেছে, তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
ত্রিপুরা রাজ্যের ২২০টি স্কুল এবং ২৪টি কলেজে এই সমীক্ষা চালায় ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল ব্যুরো (TACB) এই সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরাই এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৮২০ জন পড়ুয়া এইডস আক্রান্ত বলে জানা যাচ্ছে ওই রিপোর্টে। যার ফলে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে দেশজুড়ে। কারণ ত্রিপুরা থেকে বহু ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পৌঁছে যান। ফলে তাদের মাধ্যমেই সারাদেশব্যাপী এইডস ছড়িয়ে পড়ার এক আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। ওই সমীক্ষায় এমনও জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে প্রায় ৪৭ জন পড়ুয়া এইডস আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে, কি কারণে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে এত বেশি পরিমাণে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে? বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এইডস সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখানে এইডস আক্রান্তদের বিষয়ে কি কি করণীয়, তা স্পষ্টভাবেই জানানো হয়। যদিও এইডস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কিন্তু সরাসরি রক্তের মাধ্যমে যদি একজন এইডস রোগীর সঙ্গে অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি সম্পর্কযুক্ত হয়ে যান, তাহলে তার এইডসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল ব্যুরোর সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে যে চিত্রটি উঠে এসেছে, তা আরও ভয়াবহ।
আরও পড়ুনঃ আজ চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন, আগেরবারের ফলাফল ধরে রাখতে পারবে বিজেপি?
সমীক্ষা রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে এই ত্রিপুরা হয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক পাচার করা হচ্ছে। ত্রিপুরায় স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে মাদক নেওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। একজন পড়ুয়া মাদক নেওয়ার পরে সেই সিরিঞ্জ দিয়ে একাধিক পড়ুয়া মাদক নিচ্ছেন। আর একটি সিরিঞ্জ বহু পড়ুয়া ব্যবহার করার ফলে এইডস আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও সেইভাবেই বেড়ে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই কোনো পড়ুয়া যদি একটি সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক নেন, ফলে তার রক্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয় সেই সিরিঞ্জটি। পরবর্তীতে কোনো সুস্থ পড়ুয়া যদি মাদক নেওয়ার জন্য ওই সিরিঞ্জ ব্যবহার করেন, তাহলে তার শরীরে এইডস বাসা বাঁধতে পারে। এবার প্রশ্ন উঠছে, ত্রিপুরা জুড়ে মাদকের এত রমরমা কিভাবে? অন্যান্য রাজ্যগুলিতে যে মাদক চোরাচালান বা পাচার হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু ত্রিপুরার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) সেন্ট্রাল নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (CNCB) পক্ষ থেকে বহুবার মাদক পাচার আটকানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও মাদক পাচার বন্ধ করা যায়নি। ফলে বিএসএফ, নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো সহ নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির কর্মকান্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।