রাজীব ঘোষ: কর্মজীবন চলাকালীন ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বিশেষত বার্ধক্যের সময় যখন কাজ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখন কিভাবে নিজের দৈনন্দিন জীবনযাপন করবেন এবং সংসারের আনুষঙ্গিক প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাবেন, সেই ব্যাপারে কর্মজীবনের শুরু থেকেই একটা পরিকল্পনা করে নিতে হয়।
বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি করেন না, বেসরকারি কোনো ছোটখাট সংস্থায় চাকরি করেন কিংবা কোনো ছোটখাট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে অবসরের সময়ে অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সে যখন কাজ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখন কিভাবে নিজের জীবনের চাহিদা মেটাবেন, সেই বিষয়টি নিয়ে দেশের বহু মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েন।
সরকারি চাকরিজীবীদের কথা একটু আলাদা। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত পেনশন পাবেন। আবার হয়তো এককালীন থোক টাকা তাদের হাতে চলে আসবে। ফলে সাধারণ মানুষের তুলনায় তারা একটু নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারেন। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ, যারা সাধারণ কোনো কাজ করে জীবন যাপন করেন, তাদের বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে চলবে, তাই নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
প্রতিমাসে যদি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা হাতে আসে, তাহলে বার্ধক্যের সময় তা দিয়ে অনেকখানি উপকৃত হতে পারেন। আর এটাকেই বলা হয় পেনশন সিস্টেম (Pension System) যদি প্রতিমাসে একটু ভালো অংকের টাকা পেনশন পাওয়ার জন্য আগে থেকে কোনো সঠিক জায়গায় নিরাপদে বিনিয়োগ করার সুযোগ পান, তাহলে তা এক্ষুনি শুরু করা দরকার।
তবে প্রথমেই হিসেব করতে হবে, অবসরের জন্য হাতে আর কতদিন সময় আছে। এখন আপনার কাছে কত পরিমান টাকা রয়েছে এবং বৃদ্ধ বয়সে প্রতি মাসে কত অংকের টাকা আপনি পেনশন নিতে চাইছেন।
তবে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন, এরকম একটি স্কিম নিয়েই এখানে আলোচনা করা হবে। এখানে বলে রাখা দরকার, বার্ধক্যে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সংখ্যায় পেনশন পেতে চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি জনপ্রিয় স্কিম হলো- ন্যাশনাল পেনশন স্কিম(Pension Scheme) বা NPS এই স্কিমে সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত নিরাপদ পেনশনের সুবিধা পেতে পারেন আপনি।
এক্ষেত্রে আবার জেনে রাখা প্রয়োজন, বেসরকারি কর্মচারী থেকে সাধারণ ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা এই পেনশনের সুবিধা পাবেন, শুধু তাই নয়, সরকারি কর্মচারীরাও ইচ্ছা করলে সঞ্চয়ের মাধ্যমে এই NPS- এর সুবিধা পেতে পারেন। যত কম বয়স থেকে আপনি এই স্কিমে টাকা জমা করতে শুরু করবেন, ভবিষ্যতে আপনার পেনশনের পরিমাণও বৃদ্ধ বয়সে ততটাই বেশি হবে। অর্থাৎ যদি সঠিক পদ্ধতিতে এই স্কিমে টাকা জমা করেন তাহলে খুব সহজে অবসর নেওয়ার পর বৃদ্ধ বয়সে প্রতি মাসে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন। এই ন্যাশনাল পেনশন স্কিম এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, আপনার সঞ্চিত টাকার একটি অংশ একেবারে থোক একসঙ্গে হাতে পাবেন এবং বাকি টাকাটা প্রতি মাসে পেনশন হিসেবে পেতে থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য রাজ্য সরকারের নতুন প্রকল্প, রয়েছে একাধিক সুযোগ সুবিধা
এবার দেখা যাক, অবসর নেওয়ার পরে প্রতি মাসে ৫০০০০ টাকা কিভাবে পেতে পারেন? একটা সাধারণ হিসাব অনুযায়ী যদি ধরে নেওয়া যায়, আপনি ৩৫ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ন্যাশনাল পেনশন স্কিম বা NPS এ ২০০০ টাকা করে জমা করেন, তাহলে ৬০ বছর পর্যন্ত টাকা জমা করার পর আপনার মোট টাকা হবে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৪১ টাকা। এবার (৬০-৩৫)=২৫ বছর পর্যন্ত আপনাকে ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। এবার যদি ১২ শতাংশ হারে আপনি সুদ পেয়ে থাকেন, তাহলে মেয়াদ শেষে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৪১ টাকা পাচ্ছেন। এর ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯০৫ টাকা থোক হাতে পাবেন এবং বাকি টাকা প্রতি মাসে পেনশন হিসেবে পেতে থাকবেন। সেই টাকার অংক আবার প্রতি মাসে আপনার হাতে আসবে ৪৭ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি পেনশন আপনি অবসরের সময় পাবেন। ফলে এই ন্যাশনাল পেনশন স্কিম বা এনপিএস যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি পেনশন প্রকল্প।