রাজীব ঘোষ: বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ এমন কোনো মানুষ এই মুহূর্তে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) সঙ্গে সারাদিনে কোনো না কোনোভাবে সময় কাটান না। আর অধিকাংশ মানুষেরই Facebook, Instagram,X Handle, Snapchat-এ এক বা একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর এখন তো শর্ট টাইম এর রিলস (Reels Video) বানানো একটা নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।
বহু যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, এমনকি মধ্যবয়স্করাও এই মুহূর্তে রিলস বানিয়ে প্রায় নিয়মিত Instagram, Facebook সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পোস্ট করছেন। এবার এই শখের তৈরি করা রিলস যে কতটা চরম দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি তৈরি করে দিতে পারে, তা এই ঘটনায় সামনে উঠে এসেছে।
স্ত্রী নিয়মিত রিলস ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন। আর এই নিয়মিত রিলস তৈরি করা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বহুবার অশান্তি ঝগড়া ঝঞ্ঝাট হয়েছে। স্বামীর মুখের উপর জবাব দিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী। তিনি রিলস তৈরি করা ছাড়বেন না। ফলে দাম্পত্য কলহ একেবারে চরম মাত্রায় পৌঁছে যায়।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুরের বাসিন্দা সুজয়- শম্পা (দুজনেরই নাম পরিবর্তিত) ১৮ বছরের বিবাহিত জীবনে দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই ছিলেন। কিন্তু তাদের এই শান্তির সংসারে অশান্তির রূপ নিয়ে হাজির হয় রিলস। স্ত্রী শম্পা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রিলস তৈরি করে বিভিন্ন সমাজের মাধ্যমে একাউন্টে পোস্ট করা। আর এতেই ছিল স্বামীর চরম আপত্তি। মাঝেমধ্যেই রিলস ভিডিও তৈরি করা নিয়ে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে কলহ হতে শোনা গিয়েছে। দাম্পত্য জীবনে সাধারণ কোনো ছোটখাটো ঝগড়া ঝামেলা হয়ে থাকে।
কিন্তু রিলস তৈরি করাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর এই অশান্তি যে চরম পরিণতির দিকে গড়াবে, তা কেউই অনুমান করতে পারেননি। স্ত্রীর মুখের উপর জবাব দেওয়া শুনেই স্বামী চরম দুঃখে গভীর রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আরও পড়ুনঃ স্কুলের ভিতরেই শিক্ষিকাকে টেনে কোলে তুলে নিলেন হেডমাস্টার, জড়িয়ে ধরলেন শিক্ষিকাও
আর এই ঘটনায় মেদিনীপুর শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বছর ৪৫ এর সুজয় (নাম পরিবর্তিত) স্ত্রীর রিলস করা নিয়ে ঝগড়ার জেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যা মুহূর্তের মধ্যে ওই পরিবারকে চরম বিপদে ফেলে দিয়েছে। এই মুহূর্তে তাদের দুটি সন্তান বড় হচ্ছে। স্বামীর হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার পর স্বামীর দেহ উদ্ধার করে গভীর রাতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তারপর বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। কোতোয়ালি থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যেহেতু স্ত্রীর ভিডিও বানানোকে কেন্দ্র করে একটি পরিবারের এই চরম পরিণতি, ফলে নেট দুনিয়াতেও নাগরিকেরা বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। প্রত্যেকের একটাই বক্তব্য, আর যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শখ মেটাতে গিয়ে যেন কোনো সংসারকে এই চরম মূল্য দিতে না হয়।