পুজো উদ্যোক্তাদের সাহসী পদক্ষেপ, তিলোত্তমার বিচার না মেলায় বন্ধ হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

আর জি কর(R G Kar) হাসপাতালের জুনিয়র মহিলা ডাক্তার অভয়াকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। 9 অগস্ট সকালে সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁর নিথর দেহ। ময়না তদন্ত করে তরুণীর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তিলোত্তমার বিচার চেয়ে একত্রিত হয়েছেন এই রাজ্যের সাধারণ নাগরিকগণ। নেওয়া হয়েছে একের পর এক কর্মসূচি। বারে বারে রাস্তায় নেমেছে জনগণ। জুনিয়ার ডাক্তার- আইনজীবী -সেলিব্রিটি বাদ যায়নি কেউই। কলকাতা থেকে গ্রামেগঞ্জে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বোত্ত, কিন্তু তিলোত্তমার বিচার এখনও অধরাই।

তিলোত্তমা কান্ডের ছায়া পড়েছে এবারের পুজোতেও, বারে বারেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসী দের উৎসবে ফিরতে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু দেখা গেছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশকয়েকটি পুজো কমিটি সরকারের দেওয়া পুজোর অনুদান নেবেনা বলে ঘোষণা করেছে। পুজোর আগে ভিড় কমেছে বাজার থেকে সপিংমল।

তবে শুধুমাত্র দূর্গোৎসব নয় এবার শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব চারদিনব্যাপী প্রতিবছর রীতি মেনে হয়ে চলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় থানার অন্তর্গত চ্যামিটাড়া গ্রামের চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ ক্লাব।

আরও পড়ুন: ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কি বিশ বাঁও জলের তলায়? নবান্নে ফের বৈঠকে দেব

এই বছর ছিল চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ ক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি, তাই বছরের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছিল নানান উৎসব মুখর কার্যক্রম। ক্লাব সদস্যরা ও পূজা কমিটি মুখিয়ে ছিল শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসবের জন্য। ঠিক হয়েছিল অনুষ্ঠান সূচি থেকে অতিথি তালিকা। কিন্তু আর জি কর কান্ডের পর এই উৎসবে মাতবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্যোক্তারা। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নারীশক্তির আরাধনা করতে গিয়ে আমরা যখন নিজেদের মা-বোন দের সুরক্ষা দিতে পারিনা, নির্যাতিতার বিচার এনে দিতে পারিনা তখন উৎসব কিসের? তাই এবছর “মা” এর পূজা ছাড়া কোন উৎসব হচ্ছে না চ্যামিটাড়া নবীন সংঘের পক্ষ থেকে।

এ ব্যপারে ক্লাব সভাপতি নলিনীকান্ত দাস জানিয়েছেন। “দশকের পর দশক ধরে চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ এই এলাকার সাধারণ মানুষকে সমাজের উন্নয়নে, সামাজিক উন্মেষের জন্য প্রয়াস চালিয়ে এসেছে, এই এলাকায় সাংস্কৃতিক সম্পদের বিকাশে চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ সবসময় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া দরকার নচেত ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই প্রতিবাদের এই পন্থা আমারা বেছে নিয়েছি।”

ক্লাব সম্পাদক নবেন্দু বিকাশ দাস বলেন- এই এলাকায় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক জাগরণে চ্যামিটাড়া নবীন সংঘের অবদান এলাকার মানুষ জানেন। তাই সবাই মুখিয়ে থাকেন চ্যামিটাড়া নবীন সংঘের শ্রী শ্রী সার্বজনীন শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসবের চারটে দিনের জন্য। এবার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরের প্রায় প্রতিটি মাসেই আমরা কিছু না কিছু অনুষ্ঠান ও খেলার আয়োজন করেছি। আর বিগত কয়েক দশক ধরে শ্যামাপূজার কয়েকটা দিন আমরা সবাই মিলিত হয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, নরনারায়ন সেবার আয়োজন করে আসছি। এবার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তা আরও বড়ো আকারে করার পরিকল্পনা থাকলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার পূজা ছাড়া আর কিছুই করব না। চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ সবসময় চেষ্টা করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, ক্লাব সদস্যরা এলাকার ঘটে চলা নানান অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে বারেবারে রুখে দাঁড়িয়েছে। আর আজ এতো বড় একটা ঘটনার বিরুদ্ধে যদি না আমরা প্রতিবাদ করি তাহলে আমাদের কোন অধিকার নেই মাতৃ শক্তির আরাধনা করার। তাই ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সমস্ত কিছু ঠিক পূর্ব থেকে ঘোষিত থাকলেও আমরা তা থেকে পিছিয়ে এসেছি, আমাদের বিবেক, আমাদের সমাজ এই পরিস্থিতিতে উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার শিক্ষা দেয়না।”

শুধুমাত্র ক্লাব সম্পাদক বা সভাপতি নয়, ক্লাবের সহ সম্পাদক সন্দিপ পাল এবং কোষাধ্যক্ষ নেপাল পালের মুখেও একি কথা শোনা গেল। তাই এবার উৎসবে মাতবে না চ্যামিটাড়া নবীন সংঘ‌।পুজো উদ্যোক্তাদের এমন সাহসী পদক্ষেপে গর্বিত এলাকাবাসীও, তিলোত্তমার বিচার না মেলায় বন্ধ হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান‌।