Midnapore: ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন একজন ভাল ফুটবলার হওয়ার। সেই লক্ষ্য স্থির করেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা ঋতু সোরেন। পরিবারে নিদারুণ অভাব থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই আদিবাসী তরুণী। সম্প্রতি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়া মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ঋতু। সুযোগ পেতেই তার সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে হয় তাও দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলার এই মেয়ে।
মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় নজর কেড়েছেন ঋতু। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ব্লকের রেন্টিয়ার বাসিন্দা ঋতু সোরেন। ছোট থেকেই ফুটবলের ওপর তার দখল চোখে পড়ার মতো। খেলা যেন তার প্রাণভোমরা। গোয়ালতোড় কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই নিয়ম করে প্র্যাকটিস করতেন ফুটবল। শুধু নিজের প্রতিভাকে সকলের সামনে আনার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই আদিবাসী তরুণী। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও কম ছিল না তার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে জেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল প্রতিযোগিতায় ডাক পড়লো ঋতুর।
কথায় আছে, সুযোগ বারবার আসে না। উক্তিটি যেন একেবারে ফলে গেল বাংলার এই মেয়ের ক্ষেত্রে। মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে পারবেন জেনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন ঋতু। মাঠে নেমেই বিপরীত পক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তার জায়গাটা। গোটা প্রতিযোগিতায় বেশিরভাগ সময়ে ফুটবল ছিল তার দখলে। বিপরীত দলের শত্রুদের কাটিয়ে, জোরালো শট, আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ, উচু হেড ও দুর্দান্ত ডিফেন্সের মধ্য দিয়ে ঋতু বুঝিয়ে দিয়েছেন কোনও কিছুই মানুষের চেষ্টার সামনে বড় হয়ে দাঁড়াতে পারেনা। ফুটবলের ময়দানে কৃষক পরিবারের এই মেয়ের ফুটবল শৈলী প্রশংসিত হয়েছে দর্শকদের কাছে।
প্রসঙ্গত, ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় চোট লাগে ঋতুর বাঁ হাতে। জোরালো আঘাতে হতের হাড় বেরিয়ে আসে তার। দীর্ঘ চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে ভর্তি করা হয় বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালে। সেখানেই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় বাঁ হাত। তবে ঋতুর দাবি, একটি হাত না থাকায় খেলায় তার কোনও সমস্যা হয় না। বহু নামজাদা ফুটবল টিমের সাথে খেলেছেন তিনি। ভবিষ্যতে একজন বড় ফুটবলার হিসেবে নিজেকে দেখতে চান ঋতু। সেই ইচ্ছেতেই প্রতি মুহূর্তে শান দিচ্ছেন বাংলার এই তরুণী।