চিফ রিপোর্টার- অর্পণ ভট্টাচার্য্য
Midnapore Election 2024: মেদিনীপুরের উপ-নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা! এবার তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে! সূত্রের খবর, আসন্ন উপ-নির্বাচনে (By Election 2024) মেদিনীপুর (Midnapore) বিধানসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হতে চলেছেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। আরও জানা গিয়েছে, উপ-নির্বাচনে (By Election 2024) প্রার্থী হিসাবে দিলীপের নাম চূড়ান্ত করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এছাড়াও নৈহাটি আসনে অর্জুন সিং ও সিতাই আসনে নিশীথ প্রামানিকের নাম প্রার্থী হিসাবে ঠিক হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আগামী সপ্তাহে অমিত শাহ এই রাজ্যে এসে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারেন।
দিন কয়েক আগেই নির্বাচন কমিশনের তরফে মেদিনীপুর সহ রাজ্যের ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ হবে ১৩ নভেম্বর। ইতিমধ্যে শুক্রবার থেকে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে লাগু হয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। রাজ্যের মেদিনীপুর, তালডাংরা, নৈহাটি, হাড়োয়া, সিতাই ও মাদারিহাট আসনে হবে উপ-নির্বাচন৷ সূত্রের খবর, মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ, নৈহাটি আসনে অর্জুন সিং ও সিতাই আসনে নিশীথ প্রামানিকের নাম প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আগামী সপ্তাহে যা ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা। সূত্রের খবর সত্য হলে মেদিনীপুরে প্রত্যাবর্তন করতে চলেছেন দিলীপ ঘোষ।
উপ-নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই যে আসনটি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি চর্চা, সেটি মেদিনীপুর। কারণ অবশ্যই দিলীপ ঘোষ! সেটা ২০১৬ সাল। খড়গপুর সদর কেন্দ্র থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দিলীপ। খড়গপুর সদর থেকে ১০ বার বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হওয়া কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপালকে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। তার আগে ২০১৫ সালে এই রাজ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেন। দিলীপ ঘোষ এমন এক সময়ে রাজ্যে বিজেপির দায়িত্ব নিয়েছিলেন যখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অস্তিত্ব প্রায় ছিলই না। এরপর আসে ২০১৯ সাল। লোকসভা নির্বাচন। দিলীপের নেতৃত্বে রাজ্যে অসাধারণ ফলাফল করে বিজেপি। ১৮টি আসনে জয়ের পাশাপাশি ৪০.২৫% ভোট পায় গেরুয়া শিবির। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন স্বয়ং দিলীপ। এরপর ২০২০ সালে পুনরায় দিলীপ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হন।
বিজেপির তরফে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পালাবদলের ডাক দিয়ে তীব্র প্রচার চলে। কিন্তু বিজেপি ৭০টির উপর আসন পেলেও সামগ্রিক ফল আশানুরূপ হয়নি। রাজ্য সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হন দিলীপ। এখানেই শেষ নয়! যে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি আক্ষরিক অর্থেই বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের গড় হিসাবে পরিচিত ছিল, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে সেই মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। মেদিনীপুর আসনে তৃণমূলের জুন মালিয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করে অগ্নিমিত্রা পালকে। বিজেপির এই সিদ্ধান্তে দলের নেতাকর্মীরা তো বটেই বিরোধীরাও ভ্রু কুঁচকে ছিলেন। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দিলীপ-গড়ে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি বিজেপি-কে সমস্যায় ফেলতে পারে। বাস্তবেও তাই ঘটে। মেদিনীপুরে বড় ব্যবধানে হারেন অগ্নিমিত্রা। প্রায় অপরিচিত বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে পরাজিত হন দিলীপও।
লোকসভা ভোটের পর বিজেপির দলীয় পর্যালোচনা শুরু হলে বিজেপির অনেক পুরাতন নেতাকর্মীই দিলীপের পক্ষে মুখ খোলেন। এমনকি তৃণমূল থেকে আগত নব্য-বিজেপিদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ও ফলাফল দুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী মানস ভূঁইয়াকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৮৮ হাজার ৯৫২ ভোটে হারিয়ে দিল্লি যাত্রা করেছিলেন দিলীপ। সাংসদ হিসাবে মেদিনীপুরে বিভিন্ন জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যেত দিলীপকে। খড়গপুর ও মেদিনীপুরে রেলের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁকে তদ্বির করতেও দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতামত, তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রদীপ সরকার জেতার পরেও ফের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে খড়গপুর সদর আসনটি পুনরুদ্ধার করেন বিজেপি প্রার্থী হিরণ। সেক্ষেত্রে এহেন দিলীপ ঘোষকে কেন নিজের জেতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে সরানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে জলের অন্দরেই।
এবার ফের একটি নির্বাচন। জুন মালিয়া লোকসভা নির্বাভনে জয়ী হওয়ায় মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি ফাঁকা হয়েছিল। উপ-নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুরে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করার বিষয়ে। যদিও সূত্রের খবর, এই প্রার্থী হওয়ায় সম্মত ছিলেন না স্বয়ং দিলীপই। অনুমান করা হচ্ছে, দিলীপকে রাজি করাতে আসরে নামতে চলেছেন বিজেপির খোদ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা। এখন দেখার সত্যই দিলীপ তাঁর পুরাতন গড়ে প্রত্যাবর্তন করে প্রার্থী হন কিনা।