রাজীব ঘোষ: পূর্ব মেদিনীপুরে (Midnapore) একি হল! মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, সরকারি জায়গায় জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে। আর তারপরেই পুলিশ প্রশাসন আধিকারিকরা চালাচ্ছেন বুলডোজার। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের (Midnapore) তাজপুরে সমুদ্র সংলগ্ন বন দপ্তরের জায়গায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করতে গিয়ে ফরেস্ট অফিসার মনিষা সাউ পূর্ব মেদিনীপুরের (Midnapore) রামনগরের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী অখিল গিরির হুমকির মুখে পড়লেন।
বনদপ্তরের ওই জায়গায় তাজপুরের সমুদ্র সৈকতে দীর্ঘদিন ধরেই বেশ কিছু দোকান ছিল। কিন্তু সমুদ্রের গ্রাসে তা জলের অতলে তলিয়ে যায়। তারপর ফের শুক্রবার রাতে ব্যবসায়ীরা ওখানে দোকান তৈরি করতে গেলে ফরেস্ট অফিসার মনীষা সাউ বাধা দেন। সেখানে অবৈধভাবে দোকান করা যাবে না বলে তিনি জানান। আর এর পরেই ওই জায়গায় উপস্থিত হন রামনগরের বিধায়ক এবং রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। ঐ মহিলা ফরেস্ট বিট অফিসারকে রীতিমতো আঙুল নাচিয়ে হুমকি দিয়ে অখিল গিরি বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনার আয়ু আর খুব বড়জোর ৭-৮ দিন…. তার মধ্যেই আপনার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করুন, না হলে থাকতে পারবেন না।” ঐ মহিলা বিট অফিসার মনীষা বলেন, “আমার কারো সঙ্গে শত্রুতা নেই। আমি আমার ডিউটি করতে এসেছি।”
অভিযোগ, ঠিক তখনই কারামন্ত্রী অখিল গিরি ধেয়ে যান ওই মহিলা বিট অফিসারের দিকে। আঙুল নাচিয়ে বলেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে এখান থেকে আর ফিরে যেতে পারবেন না। মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেওয়া হবে। আপনাদের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে কি দুর্নীতি হয়.. সব জানি, ঐসব বিট অফিসার ফরেস্ট অফিসার.. ওসব দেখাবেন না। সরকারের আন্ডারে কাজ করছেন, মাথা নিচু করে কথা বলুন। জানোয়ার, বেয়াদপ.. এরকম মহিলা অফিসার জীবনে দেখিনি।” এখানেই থামেননি কারামন্ত্রী। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে বলেন, “ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের যে দুর্নীতি আছে, আপনি বিট অফিসার.. সমস্ত আমরা জানি। সমস্ত কিছু বিধানসভায় গিয়ে ফাঁস করব। আপনার মজা বুঝিয়ে ছাড়বো।” তারপরেই জায়গা দেখিয়ে বলেন, “এই ২৫ মিটার আমরা নিয়ে নিলাম। এই দিকে পা দিলে আর ফিরে যেতে পারবেন না।” মন্ত্রী রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন মহিলা বিট অফিসারকে।
কারামন্ত্রী অখিল গিরির এই ব্যবহার সামনে আসতেই রীতিমতো নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এটাই তৃণমূলের দলীয় শিক্ষা। বিধানসভায় ওনাকে অনেকবার দেখেছি। উনি এরকম ব্যবহারই করে থাকেন।” পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিষয়টা সম্বন্ধে আমি এখনো কিছু জানি না।” তবে কারামন্ত্রী অখিল গিরির একজন মহিলা অফিসারকে ঐভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়াতে রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।