স্বপ্নীল মজুমদার (ঝাড়গ্রাম): ঝাড়গ্রামের(Jhargram) মাটিতে পা রেখেই সিপিএম(CPM) আর বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তৃণমূলের(TMC) প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো(Chatradhar Mahato)। রবিবার ঝাড়গ্রামে দলীয় সংবর্ধনা সভায় অংশ নেন ছত্রধর। সেখানেই রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকার ও বর্তমানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল খাটানো হয়েছে। অনেককে তেমন ভাবেই জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ছত্রধর।
ছত্রধর বলেন, “আর জি কর মেডিক্যাল(RG KAR MEDICAL COLLAGE) কলেজে জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই। তবে নাগরিক সমাজকে একটা কথা বলতে চাই। ২০০৮-২০০৯ সাল থেকে এই এলাকার নিরীহ মানুষজনকে হাজারের উপর মামলায় জড়ানো হয়েছে। একযুগ জেলবন্দি থাকার পর আইনি লড়াইয়ে আমি জেলমুক্ত হই। কিন্তু আমাকে ফের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আবারও দু’বছর জেলবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এখনও অনেকে জেলবন্দি। তারা এখনও বিচার পায়নি। বিচার যখন চাইতে হবে, সবার জন্য বিচার চাইতে হবে। শুধু একটা গোষ্ঠীর জন্য নয়। ওই সব জেলবন্দি মানুষের জন্য কি একটা রাত জাগবেন তো সবাই, আমি প্রশ্ন করছি। দাবিও রাখছি।” এরপর সুর চড়িয়ে ছত্রধর বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে জঙ্গলমহল বলে কোনও জায়গা ছিল না। আজকে নিপীড়িত মানুষের আন্দোলন ও ঘাম-রক্তের বিনিময়ে জঙ্গলমহলকে চিনেছে সারা দেশ, গোটা বিশ্ব। জঙ্গলমহলের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। ২০০৮-০৯ সালে বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলাকার মানুষ পরিবর্তন এনেছেন। ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
সত্যের জয় হবেই।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথম দফায় বামফ্রন্ট সরকারের সৌজন্যে দশ বছর জেল খেটেছি। পরবর্তী পর্যায়ে এক বছর আপনারা আমাকে দেখেছিলেন। তারপর অমিত শাহের দলবলের সৌজন্যে আমাকে ফের আড়াই বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। আমি এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম, আছি থাকব।” এদিন সকালে কলকাতা থেকে রওনা দেন ছত্রধর। গুপ্তমন্দিরে পুজো দেন। তারপর ছত্রধর বালিভাসায় পৌঁছলে এলাকায় দলীয় কর্মীরা ছত্রধরকে সংবর্ধনা দেন। তারপর ছাদ খোলা গাড়িতে শোভাযাত্রা করে ছত্রধরকে লোধাশুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছৌ দল ও আদিবাসী নৃত্য দলের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে ছত্রধরকে লোধাশুলির মঞ্চে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে ছত্রধরকে স্বাগত জানান জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো, ঝাড়গ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নরেন মাহাতো, প্রাক্তন মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো, ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত সাহা প্রমুখ।
এরপর ঝাড়গ্রাম শহরের সাবিত্রী মন্দির মোড়ে ঝাড়গ্রাম পুরসভার কাউন্সিলর আর্য ঘোষের নেতৃত্বে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সাবিত্রী মন্দিরেও পুজো দেন ছত্রধর। শহরে রোড শো করে ছত্রধরকে নিয়ে আসা হয় সাবিত্রি সিনেমা হল মোড়ে। সেখানে রাধানগর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বিদ্যুৎ ঘোষের উদ্যোগে মঞ্চ করা হয়েছিল। সেখানে জেলা সভাধিপতি, চিন্ময়ী মারান্ডি ও পুর প্রধান কবিতা ঘোষ ছত্রধরকে সংবর্ধনা দেন। সব জায়গায় প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন ছত্রধর। এরপর লালগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ছত্রধর। দহিজুড়ি এলাকায় লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি রাজু হাঁসদার নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা ছত্রধরকে সংবর্ধনা দেন। এরপর দুপুর আড়াইটা নাগাদ লালগড়ে পৌঁছন ছত্রধর। লালগড় দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছত্রধরকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তারাচাঁদ হেমব্রম। পৌনে তিনটা নাগাদ লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে পৌঁছলে ছোট বৌমা শুকতারা ছত্রধরের পা ধুইয়ে দেন। ছত্রধরের মা বেদনবালা ছেলেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে ঘরে তোলেন। ছত্রধর বলেন, ‘‘এত মানুষের ভালবাসা পেয়ে আমি অভিভূত! আমাকে মানুষ মনে রেখেছেন এটা আমার প্রাপ্তি। আপাতত কয়েকদিন বাড়িতে বিশ্রাম নেব। তারপর মানুষের কাজ করব।’’ তবে দলের কাজ করবেন কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট জবাব দেননি ছত্রধর।