জার্মানিতে(Germany) এমবিএ পড়তে গিয়ে করোনা পরিস্থিতির জেরে চরম সঙ্কটে পড়েছিলেন ঝাড়গ্রামের(Jhargram) ভূমিপুত্র জনা মান্ডি। চার বছর পর মনের জোরে বিশ্বের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতা ‘আয়রন ম্যান’(Iron Man) খেতাব অর্জন করলেন আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওই যুবক। জনার বয়স ৩৩ বছর। বর্তমানে জার্মানির(Germany) একটি বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থার অপারেশনস ম্যানেজার পদে চাকরি সূত্রে বার্লিনে(Berlin) থাকেন তিনি। গত ১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) জার্মানির ডুইসবার্গ(Duisburg) শহরে আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় নাগাড়ে রাইন নদীতে সাঁতার কেটে, তারপর দীর্ঘ পথ সাইক্লিং ও দৌড়ে ‘আয়রন ম্যান’ হয়েছেন জনা।ভারত থেকে যোগ দেওয়া পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে জনা তৃতীয় হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক দিবসে শিক্ষারত্ন ফেরালেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আয়রন ম্যান প্রতিযোগিতায় আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম হল প্রতিযোগীকে প্রথমে ১.৯ কিমি সাঁতার কাটতে হয়। সাঁতার শেষ করার পরেই সাইকেলে উঠে ৯০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে হয়। সাইকেল পর্ব শেষ হওয়ার পর প্রতিযোগীকে ২১.১ কিমি দৌড়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। সবাই এই ইভেন্ট সম্পূর্ণ করতে পারেন না। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যান, অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে আট ঘণ্টার মধ্যে প্রতিযোগী তিনটি ইভেন্ট সম্পূর্ণ করতে না পারলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান। জনা অবশ্য পুরো ইভেন্ট সম্পন্ন করেছেন ৬ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে। রাইন নদীতে সাঁতার কেটেছেন ৩৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ড। ডুইসবার্গ শহর ছাড়িয়ে গ্রামের রাস্তায় সাইকেল চালিয়েছেন ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট ২৯ সেকেন্ড। দৌড়েছেন ২ ঘণ্টা ২৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড। শারীরিক পরিশ্রমে অনেক প্রতিযোগী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবার ৩,২৫০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে মাত্র ১,৮৮৭ জন ইভেন্ট সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলেন।
জনা বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিযোগীরা বিশেষ ট্রেনার রেখে অনুশীলন করেন। আমি চাকরির অবসর সময়ে নিজেই অনুশীলন করেছি। আমার কোনও ট্রেনার ছিল না।”
জনার বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পালোইডাঙা গ্রামে। বাবা প্রয়াত ধীরেন্দ্রনাথ মাণ্ডি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত রেল আরক্ষা বাহিনীর কর্মী। দিল্লি মোনাডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যায় স্নাতক জনা ২০১৭ সালে বার্লিনে এমবিএ (ইন্টারন্যাশন্যাল মার্কেটিং) পড়তে যান বার্লিনের আইইউবিএইচ ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনির্ভাসিটিতে।
বার্লিনে পার্টটাইম চাকরি জুটিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে থাকেন। ২০২০ সালে করোনা কালে পার্ট টাইম চাকরি হারিয়ে ভীষণই সমস্যায় পড়েন। পরে শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে এমবিএ সম্পূর্ণ করে বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থার অপারেশনস ম্যানেজারের চাকরি পান।