স্বপ্নীল মজুমদার (ঝাড়গ্রাম): ২২ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবস। অথচ মৃত্যুর পাঁচ বছর পরেও কার্যত উপেক্ষিত থেকে গিয়েছেন ‘ঝুমুর গানের সম্রাট’ বিজয় মাহাতো। অনুরাগীদের দাবি সত্ত্বেও ঝাড়গ্রাম শহরে বসেনি তাঁর মূর্তি। স্মৃতি রক্ষার্থে নেই কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ। শনিবার শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করলেন অনুরাগীরা। নেতৃত্বে ছিলেন ঝাড়গ্রাম পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী অজিত মাহাতো।
ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম লাগোয়া ‘মা মাটি মানুষ’ ভবনে আয়োজিত ওই স্মরণ সভায় অজিতবাবু জানালেন, শহরে বিজয় মাহাতোর পূর্ণবয়ব মূর্তি বসানোর জন্য পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে জায়গা ঠিক করা হবে। অনুরাগীদের দানে তৈরি হবে ঝুমুর সম্রাটের মূর্তি।
বিজয় মাহাতো ছিলেন জঙ্গলমহলবাসীর হৃদয়। তাঁর গানের সুরে মজে রয়েছে আট থেকে আশি। ঝুমুর গানকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশাতেও তিনি ‘ঝুমুর সম্রাট’ নামেই বেশি পরিচিত।
আরও পড়ুনঃ লোকালয়ে শেয়াল, পাকড়াও করল বন দফতর
ভবতোষ শতপথী, ললিতমোহন মাহাতো, সুনীল মাহাতোর মত ডাকসাইটে গীতিকারদের লেখা অজস্র গান গেয়েছেন বিজয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সুনীল মাহাতোর লেখা, ‘পিঁদাড়ে পলাশের বন, পালাব পালাব মন নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে। বতরে পিরিতি ফুল ফুটে’। ভবতোষ শতপথীর লেখা ‘একটা ধমসা বনাই দে, একটা মাদল কিনে দে…হামি গাইব বাজাব, মইচ্ছা পড়া জীবনটাকে বেদম পাঁজাব’ গানটি তো আজও জঙ্গলমহলবাসীর মুখে মুখে ফেরে। সব গানেই জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের জনজীবনের লড়াইয়ের কথা। বিজয় যেন জঙ্গলমহলের কথামুখ।
প্রখ্যাত ঝুমুর সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলছিলেন, ‘‘আমি কোনও গান সুর করতে গেলে দেখি বিজয়কাকু কত বছর আগে সেই কাজ করে গিয়েছেন। ঝুমুরের সুর তাঁর রক্তে। অথচ মানুষটা জীবদ্দশায় যথাযোগ্য সম্মান পেলেন না। মৃত্যুর পরেও তাঁর স্মৃতি রক্ষায় সেভাবে উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।’’ ২০১৯ সালের ২২ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিজয়ের মৃত্যু হয়। আদতে জামবনির কাদোপিন্ড্রা গ্রামের বাসিন্দা হলেও কয়েক দশক ধরে ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বিজয়। তাঁর পরিজনরা সেখানেই থাকেন। বিজয়ের মৃত্যুর পরে তাঁর অনুরাগীরা মধুবন এলাকায় বিজয়ের মূর্তি স্থাপন ও প্রয়াত শিল্পীর নামে রাস্তার নামকরণের দাবি করেছিলেন পুরসভার কাছে। শিল্পীর নামে ঝুমুর অ্যাকাডেমি গঠনের দাবিও রয়েছে।
ঝুমুর গানের বর্ষীয়ান গীতিকার ললিতমোহন মাহাতো বলছেন, ‘‘ঝুমুরগানে বিজয়ের কোনও বিকল্প নেই। প্রয়াত শিল্পীর প্রতি সরকারি উদাসীনতায় আমরা হতাশ।’’ তবে অভিমান ঝরে পড়ল বিজয়ের মেয়ে পম্পা মাহাতোর গলায়। পম্পাও ঝুমুরশিল্পী। তিনি বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলবাসীর হৃদয়ে বাবা রয়েছেন। কোনও প্রত্যাশা করছি না। নিজের চেষ্টায় বাবার কাজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’ তবে পুর কাউন্সিলর অজিত মাহাতোর আশ্বাস, “বিজয় মাহাতোর স্মৃতি সংরক্ষণে আমি উদ্যোগী হচ্ছি। পুরসভা ও প্রশাসনিক মহলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা অবশ্যই শিল্পীর স্মৃতি সংরক্ষণ করব।”