Midnapore Diwali Doll: দীপাবলির ঐতিহ্য মেদিনীপুরের মাটির পুতুল, বহমান প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ধারা

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

চিফ রিপোর্টার- অর্পণ ভট্টাচার্য
Midnapore Diwali Doll: মেদিনীপুরের বিলুপ্তপ্রায় দীপাবলির মাটির পুতুলের হাত ধরে আজও বহমান প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ধারা। বৈদ্যুতিন আলো, ফানুস, চীনা এলইডি চেন ও বিভিন্ন রঙিন চীনা লাইটের দাপটে বাংলার ঐতিহ্য মাটির প্রদীপ, কূপি, ডেবরি, মোমবাতির চাহিদা যখন তলানিতে, সেই সময়ে আজও মেদিনীপুর (Midnapore) শহরের মির্জাবাজার এলাকার কুমোর পাড়ায় টিকে রয়েছে মাটির পুতুল (Diwali Doll) বা দিওয়ালি ঠাকুর তৈরির ঐতিহ্য। শহরের (Midnapore) পাশ দিয়ে বয়ে চলে কাঁসাই নদীর উৎকৃষ্ট পলি মাটি দিয়ে তৈরি দীপাবলির পুতুল (Diwali Doll) বহন করে চলেছে মেদিনীপুরের শিল্প ও সংস্কৃতির সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।

বর্তমানে প্রায় শতাধিক পরিবারের বাস মির্জাবাজার এলাকার কুমোর পাড়ায় এবং অনেকেই এখনও যুক্ত মাটির শিল্পকলার সঙ্গে। যার মধ্যে অন্যতম এই মাটির পুতুল। মূলত দীপাবলির সময়েই তার চাহিদা। যা পরিচিত দিওয়ালি ঠাকুর নামে। প্রথমে সংগ্রহ করা হয় কাঁসাই নদীর পলি মাটি। তারপর তাকে ছাঁচে ফেলে ও হাতের কারুকাজে দেওয়া হয় পুতুলের রূপ। পুতুল বানাবার কাজ সম্পুর্ণ হলে পুতুলগুলিকে রোদে হালকাভাবে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর পোড়ানো হয় ভাটিতে। পোড়াবার পর শুরু হয় রং। চুন বা খড়ি মাটির সাথে আঠা জাতীয় পদার্থ মিলিয়ে পুতুলগুলোকে প্রাথমিকভাবে সাদা রঙ করা হয়। আবার একবার রোদে শুকিয়ে নিয়ে পুতুলগুলিকে লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী, কমলা, কালো, সোনালী ইত্যাদি রকমারি রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়।

1000001263

খুদে কারিগর

এই দীপাবলির সময়ে মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ায় ঢুকলেই চোখে পড়বে থরে থরে সাজানো দেওয়ালি পুতুল, মাটির প্রদীপ ও অন্যান্য মাটির তৈরি সামগ্রী। ১০ ইঞ্চি থেকে ২-৩ ফুটের পুতুলগুলির কারও ২টি, কারও আবার আট দশটি হাত। থাকে মাটির প্রদীপ বা ডিবরি বসানোর ব্যবস্থাও। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ী ও মানুষজন এসে ভীড় করেন এখানে। যদিও বিশ্বায়নের দাপটে ক্রমশ কমছে এই সব মাটির পুতুল, প্রদীপ প্রভৃতির চাহিদা। মৃৎশিল্পী আলোক পাল GNE Bangla-র প্রতিনিধিকে বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে পুতুল বানিয়ে আসছি। কিন্তু রঙ, মাটি, কাঠ সবকিছুর দাম বেড়েছে। পুতুল বিক্রি করে লাভের মুখের দেখা মিলছে না। সব পুতুল বিক্রিও হচ্ছে না।” রাজ্য সরকারের কাছে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

আরও এক মৃৎশিল্পী গৌতম দাস জানান, “দেওয়ালি ঠাকুর, বিভিন্ন কারুকার্যের প্রদীপ সহ নানা মাটির জিনিস আমরা তৈরি করি। এটা একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবসা। দীপাবলির সময় এইগুলো তৈরি করা হয়। প্রতিবছরই ব্যবসা ভালো হয়, এই বছর বৃষ্টির কারণে ব্যবসা ক্ষতির মুখে। লাগাতার বৃষ্টির জন্য মাটির অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে। কাঁচামাল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত।”

প্রথমে লাগাতার বৃষ্টি, নিম্নচাপ সঙ্গে দোসর বন্যা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর তাই মাটির পুতুল, প্রদীপ প্রভৃতির চাহিদা অনেক কম। তবুও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে সামিল কুমোরপাড়ার প্রায় ৫০টি পরিবার। আর দিনকয়েক পরেই কালীপুজো তথা দীপাবলির উৎসব। আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠবে গোটা দেশ। সারা দেশে ইলেকট্রনিক বিভিন্ন আলোর দাপটেও বাংলার অনেক ঘরে মেদিনীপুরের দিওয়ালি ঠাকুরের সামনে ঘর আলো করবে মাটির প্রদীপ।