Khirai Flower Vally: ফুলের মাঠ ছারখার বন্যায়, পুজোর আগে ক্ষীরাইয়ের ফুলচাষিদের মাথায় হাত

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

চিফ রিপোর্টার- অর্পণ ভট্টাচার্য্য
দুর্গাপুজো আসন্ন। তার আগে ক্ষীরাইয়ের ফুলের মাঠ (Khirai Flower Vally) ছারখার। মাথায় হাত পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাইয়ের ফুল চাষিদের। একে নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টি, তারপর বন্যার জল – দুইয়ে মিলে মাঠের পর মাঠ ফুলগাছ পচে গিয়েছে। প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে পুজোয় ফুলের জোগান নিয়েই। এলাকার অনেক চাষিই ফুলের চাষ করেছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে। সেই ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে তা নিয়েও কপালে চিন্তার ভাঁজ হাজার হাজার ফুল চাষিদের কপালে।

ফুলের জন্য বিখ্যাত পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই। অনেকে ভালোবেসে Flower Vally of West Bengal হিসাবেও অভিহিত করেন ক্ষীরাই এলাকাকে। ক্ষীরাই আসলে নিকটস্থ রেলস্টেশনের নাম। পাঁশকুড়া ব্লকের দোকানদা, হাউর, পশ্চিম খোলা, জাকপুর, মাদপুর, রাধামোহনপুর গ্রামগুলির মানুষদের প্রধান জীবিকা হল ফুলচাষ। শীতকালে দক্ষিণ-পূর্ব শাখার ট্রেন থেকেই দেখা যায় ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে রয়েছে বিঘার পর বিঘা ফুলের মাঠ। কংসাবতীর নদীর একটি শাখার তীর জুড়ে মাঠের পর মাঠ দেখা যায় শুধুই ফুলের অপরূপ শোভা। ফুটে থাকে রকমারি রংয়ের গাঁদা, অ্যাস্টর, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, গোলাপ প্রভৃতি। হাজার হাজার পর্যটক সেই অপার্থিব সৌন্দর্য্যের টানে এসে ভীড় জমান ক্ষীরাইয়ে। হয় পিকনিক। এই ফুলের চাষকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক বছরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটনের অর্থনীতি। পর্যটকেরা আসেন, ফুলের বাগান ঘুরে দেখেন, ছবি তোলেন, রিল বানান। পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি, টোটোর পাশাপাশি বসে বহু দোকান। অনেকেই সেখানে ফুল, ফুলের চারা, ফুলের বোকে ক্রয় করেন। পর্যটকদের কল্যাণে এখানকার বিভিন্ন হোটেল, ফাস্টফুডের দোকান, খাবারের স্টল ও রেস্টুরেন্টেও ব্যবসা চলে জমিয়ে। ফলে ফুলচাষকে কেন্দ্র করেই এখন শীতকালের অন্যতম পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে ক্ষীরাই অঞ্চল। ফুলচাষ ও তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই পর্যটনের উপরে এখন এলাকার বহু মানুষের রুজিরুটি নির্ভরশীল। কিন্তু একের পর এক নিম্নচাপ ও তার ফলে তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতিতে এখন ক্ষীরাইয়ে কয়েক হাজার বিঘা ফুলের গাছ মাঠেই পচছে। সামনেই দুর্গাপুজো। পুজোর অনেক আগে থেকেই ফুলের বায়না আসে। সেই ফুলের জোগান কীভাবে হবে তাতেই এখন প্রশ্নচিহ্ন। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েও অনেক চাষি ফুল চাষ করেছিলেন। কীভাবে সেই টাকা শোধ হবে তা ভেবেই বিনিন্দ্র রাত কাটছে ক্ষীরাই এলাকার প্রায় ১৫ হাজার ফুলচাষি পরিবারের।

এলাকার বাসিন্দা ও ফুলচাষি সাধনচন্দ্র মাঝি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে GNE Bangla-র প্রতিনিধিকে বলেন, “পরিস্থিতি ভয়াবহ! কিন্তু আবহাওয়ার সঙ্গে আমাদের লড়াই করেই চাষবাস করতে হবে।” তিনি জানান, “বিধানসভা এলাকার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ফুলচাষের উপর নির্ভর করেন। সিজনে পর্যটকরা এসেও তা উপভোগ করেন। কিন্তু আমাদের প্রতিনিয়ত এই বর্ষা, বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। আর এই সমস্যা আজকের নয়, দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবারের ক্ষতি ব্যাপক। যে জায়গাগুলি বন্যার জলে ডোবেনি, সেই জায়গাগুলিও বৃষ্টির জলে ক্ষতিগ্রস্ত।” ফুলচাষিদের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে সহযোগিতার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।

ক্ষীরাইয়ের দোকানদা-র অপর এক ফুলচাষি স্বপন দাসের আক্ষেপ, সরকার থেকে ফুলচাষিরা কোনও রকম সাহায্যই পান না। তিনি বলেন, “বৃষ্টির ও বন্যার জলে সব ফুলচাষ প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঠিক সময়ে ফুল তোলা প্রায় অসম্ভব! এখন নিম্নচাপ ও জমিতে জল, ফলে নতুন করে চাষ করার কোনও উপায় নেই। অল্প কিছু উঁচু জমিতে চাষ বেঁচে গেলেও, চাহিদার তুলনায় তা নগন্য।” এরপর বর্ষার বৃষ্টি কমলে বিকল্প পদ্ধতিতে ফুলচাষকে কেন্দ্র করেই ফের আশার আলো খুঁজবেন ক্ষীরাইয়ের ফুলচাষিরা।