Jhargram Rajbari Durga Puja: দেবী বিদ্যমান পটেশ্বরী রূপে, ৪০০ বছর ধরে অধিষ্ঠাত্রী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

Jhargram Rajbari Durga Puja: ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে ৪১৫ বছর ধরে পুজো পেয়ে আসছেন দেবী পটেশ্বরী রূপে। কুলদেবী সাবিত্রীর মন্দিরের ভিতরে চণ্ডীমণ্ডপ এবং পটে আঁকা ছবি সাবেকি চালে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী। পুজো শুরু হয় দুর্গাপুজোর ১৫ দিন আগে। ঐতিহ্য, পরম্পরা ও নিয়ম সব কিছুতেই প্রাচীনত্ব ও স্বকীয়তা বজায় রয়েছে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির এই পুজোতে।

সাধারণ ভাবে দুর্গাপুজোর বোধন হয় মহষষ্ঠীতে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে দেবীর বোধন দুর্গাপুজোর ১৫ দিন আগেই। রাজবাড়ির কুলদেবী সাবিত্রীর নিত্যপুজো হয় দুর্গার ধ্যান-মন্ত্রে। মহাষষ্ঠীর পক্ষকাল আগে কৃষ্ণ নবমীতে হয় বোধন। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের জীতাষ্টমী তিথিতে বেলগাছের তলায় অধিবাসের মাধ্যমে পুজোর সূচনা। কিন্তু কেন এই রূপ পুজো শুরুর রীতি!

জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে গড় ঝাড়গ্রামের জংলি মাল রাজাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে হারিয়ে রাজ্যপাট দখল করেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর সিং চৌহান। কথিত আছে, তৎকালীন জঙ্গলখণ্ডের কোনও জঙ্গলে শিকারে গিয়েছিলেন রাজা। সেখানে অপরূপ এক নারীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বিবাহের প্রস্তাব দেন তিনি। নারীর শর্ত ছিল রাজা আগে যাবেন, সেই নারী তাঁর পিছনে আসবেন। কিন্তু রাজা পিছনে ঘুরতে পারবেন না। অনেক সময় চলার পর রাজা কৌতূহল দমত করতে না পেরে পিছনে ফেরেন। দেখেন সেই নারী মাটির তলায় চলে যাচ্ছেন। তা আটকাতে রাজা এসে মুঠিতে ধরেন নারীর চুলের গোছা। সেই নারী মেদিনীতলে প্রবেশ করেন, রাজার হাতে রয়ে যায় কয়েকগাছা চুল। রাজা স্বপ্নাদেশ পান সেই নারীই দেবী। এরপর ঐ স্থানে মন্দির নির্মাণ করে সেই চুলের আরাধনা শুরু করেন রাজা। এই মন্দিরেই দেবী সাবিত্রী প্রত্যহ পুজো পান। দেবীর এখানে পূর্ণ অবয়ব নেই, রয়েছে শুধুমাত্র মুখমণ্ডল।

সাবিত্রী মন্দিরের কাছেই চণ্ডীমণ্ডপে হয় দেবী দুর্গার পুজো। দেবী এখানে পটে আঁকা, পটেশ্বরী। তারই সামনে ঘট স্থাপন করে পুজো হয় প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে। রাজা সর্বেশ্বরের রাজ্যাভিষেকের দিন, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রাভিষেক অনুষ্ঠান করা হয়। পরিবারের সমৃদ্ধি ও প্রজাদের মঙ্গল কামনায় জীমূতবাহনের পুজো হয়। শক্তিলাভের কামনায় জীতাষ্টমীর পর দিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্রপূজার মাধ্যমে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুজোর রীতি অনুযায়ী, ষষ্ঠীর দিন রাতে বেলগাছের নীচে মঙ্গলঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন সকালে শোভাযাত্রা করে রাজবাড়ি থেকে খড়গ, রাজলক্ষ্মী, শালগ্রাম শিলা ও ঘট মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। দশমীর দিন একটি কলাগাছ সামনে রেখে তাকে ‘রাক্ষস’ রূপে কল্পনা করে তীর ছুঁড়ে বধ করা হয়। এই ‘পাটাবিঁধা’ সম্পন্ন করে পুজো শেষ হয়। মাঝে দিনগুলি পুজোর রীতি মেনে মাতৃ আরাধনা চলে।