দেবব্রত মণ্ডল: ফের একটা মিছিল, একটা প্রতিবাদ। এক বছর ৩০-এর তরুণীর মৃত্যু যেন রাজ্য তথা দেশবাসীর মনে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদের মশাল। সেই মশালের আলোতেই পথ হাঁটছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, স্লোগান তুলেছেন – ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ হ্যাঁ রবিবারের বিকেলে শহর কলকাতা দেখল তেমনই এক মিছিল। যে মিছিলের নির্দিষ্ট কোন রং নেই, নেই পতাকা। তারপরেও সেই মিছিল থেকেই নির্দ্বিধায় স্লোগান উঠল – ‘আমার বোনের রক্ত, হবে নাকো ব্যর্থ’ অথবা ‘বুঝে গেছে জনতা প্রশাসনের ক্ষমতা।’ আচ্ছা যদি প্রশ্ন করা হয় তিলোত্তমা কবে শেষ এমন মিছিল দেখেছে? পতাকাবিহীন যে মিছিল(RG Kar Protest) থেকে লক্ষ গলায় শোনা যায় – ‘আমরা করবো জয়’ কিংবা প্রশ্ন ওঠে – ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি?’
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না অনেকেই। আর জি করের তরুণী চিকিৎসক হত্যার পর কাটতে চলল প্রায় একটা মাস। অথচ এখনও চলছে আন্দোলন। রবিবার সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ডাক দেওয়া হয় মহামিছিলের। অথচ সেই মহামিছিল যে একটা গোটা রাতের দখল নেবে, দখল নেবে রাজপথের কেউ কি তখন ভেবেছিল? কেউ কি ভেবেছিল মিছিল শেষে এমনভাবে মিশে যাবেন তারকা থেকে সাধারণ মানুষরা। এদিন মিছিলের ডাক দেয় ‘আমার তিলোত্তমা’ নামে একটি মঞ্চ। অথচ মিছিলের পর ধর্নার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল না। মিছিল যখন মাঝপথে তখন সিদ্ধান্ত হয় রাতভর চলবে বিক্ষোভ। দিন বদলের দাবিতে রাতের দখল নেবেন আন্দোলনকারীরা। সেইমতো ধর্মতলায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তারা। ইতিমধ্যে রাজ্যের পাঁচটি দফতরকে ইমেল মারফত তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে মিছিল শুরুর থেকে আছেন স্বস্তিকা মুখার্জি, অপর্ণা সেন, সোহিনী সরকারের মতো পরিচিত মুখ। ছিলেন সৃজিত, চৈতি, সুদীপ্তারা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন প্রশাসন অথবা সরকারের তরফে কোন প্রতিনিধি এসে তাদের সঙ্গে কথা না বললে তারা ধর্না চালিয়ে যাবেন। এদিন ধর্নামঞ্চের মধ্যেই এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক মদ্যপ যুবকের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে গ্রেফতার করা হয় তাকে। এরপরই আরও তীব্র হয় প্রতিবাদ। সবমিলিয়ে একথা স্পষ্ট একটা রংহীন আন্দোলন, একটা মেয়ের বিচারের দাবিতে এই শহর লড়ছে। যে লড়াই স্পষ্টভাবেই অস্বস্তিতে ফেলছে শাসককে। ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে সমাজের কঙ্কালসার চেহারাটা। প্রশ্ন একটাই, আর কত লড়াইয়ের পর চেতনা ফিরবে শাসকের? কবে সামনে আসবে সত্যি?