স্বপ্নীল মজুমদার: বৌদিকে ডাইনি সন্দেহে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুনের দায়ে দেওরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিল ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলা দায়রা আদালত। শুক্রবার জেলা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণার পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত লব দেহুরি ওরফে শম্ভুকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা অনাদায়ে লবকে অতিরিক্ত ছ’মাস কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা বিচারক। লবের বাড়ি ঝাড়গ্রামের(Jhargram) গোপীবল্লভপুর (Gopiballavpur) থানার ভাতভাঙা গ্রামে।
সিনিয়র সরকারি আইনজীবী সত্যজিৎ সিনহা জানান, ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল লব তাঁর বৌদি সুকুমারী দেহুরিকে (৫২) কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে। লব মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হতো। এজন্য বৌদিকেই ডাইনি ঠাওরে গালিগালাজ মারধর করত সে। এই নিয়ে লব ও তার দাদা নন্দের মধ্যে বিবাদ ছিল। ঘটনার দিন সুকুমারী স্থানীয় নড়িশোল হাটে শালপাতা বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। রাতে তিনি না ফেরায় পরিবারের লোকজন ভাবেন কোনও কারণে তিনি কোথাও আটকে গিয়েছেন। কারণ, সুকুমারী ধাত্রীর কাজও করতেন। এ জন্য রাত বিরেতে আশেপাশের এলাকার তাঁর ডাক পড়ত। পরদিন ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ভাতভাঙা গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে এক মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। সুকুমারীর ছেলে লক্ষ্মী দেহুরি দেহটি তাঁর মায়ের বলে শনাক্ত করেন। আগের দিন বিকেলে লবকে কুড়ুল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছিলেন লক্ষ্মী। ওই দিনই গোপীবল্লভপুর (Gopiballavpur)থানায় অভিযোগ দায়ের করেন লক্ষ্মী।
লক্ষ্মীর অভিযোগ, লবের ঘন ঘন জ্বর হতো। অসুস্থ হলেই সে সুকুমারীকে গালিগালাজ করত। মারধর করত। সন্দেহ করত তার বৌদি গুণিন বিদ্যায় তাকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর লব গা ঢাকা দেয়। কয়েক দিন পর আঁধারকুলি গ্রাম থেকে লবকে গ্রেফতার করা হয়। রক্তমাখা কুড়ুলটিও উদ্ধার হয়। ওই বছরের ৩০ জুন ঝাড়গ্রাম(Jhargram) এসিজেএম আদালতে মামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর জেলা দায়রা আদালতে বিচারের জন্য মামলার চার্জগঠন হয়। তদন্তকারী অফিসার তারকনাথ মণ্ডল সহ ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয় আদালত। বৃহস্পতিবার লবকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। শুক্রবার সাজা ঘোষণা হয়।