ঝাড়গ্রামের (Jhargram) লালগড়ও (Lalgarh) সোচ্চার হল তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে। আরজি কর কাণ্ডের (RG Kar Case) প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) লালগড়ে পথে নামলো নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবারের সন্ধ্যায় লালগড়ের রাস্তায় মোমবাতি হাতে সাধারণ মানুষের ঢল। জোর গলায় আওয়াজ উঠলো “We want Justice”! মিছিলের পুরোভাগে নেতৃত্ব দিলেন মহিলারা। আকাশ বাতাস মুখরিত হল তাঁদের বিচারের দাবিতে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে রাতের বেলা ডিউটিরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে খুন হন পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি মহিলা চিকিৎসক। মহিলা চিকিৎসকের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা যৌন নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে খুনের চিহ্ন স্পষ্ট। রাজ্যে রাজধানী শহরের প্রথম সারির এক মেডিক্যাল কলেজের এমন ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশ। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। প্রথমে আন্দোলনে নামেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা৷ তারপর সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেও। স্তব্ধ হয়ে যায় ইমার্জেন্সি ছাড়া মেডিক্যাল কলেজগুলির অন্যান্য পরিষেবা। ধীরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। ইতিমধ্যেই সারাদেশে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন আইএমএ কর্মবিরতি পালন করেছে। সারা রাজ্য তথা দেশের মেডিক্যাল পড়ুয়ারা তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন।
অন্যদিকে ১৪ আগস্ট “নারীদের রাত দখলে”র ডাক দেওয়া হয়। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরে, এমনকি মফস্বলেও মধ্যরাত্রিতে রাস্তায় নেমে আসেন মহিলারা। প্রতিবাদে সামিল হন পুরুষেরাও। ঐ আন্দোলনের মাঝেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশ করে তুমুল ভাঙচুর চালায় কিছু দুষ্কৃতি। তাদের আটকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় পুলিশ। এই ঘটনার পরে আরও উত্তাল হয় আন্দোলন। পথে নামেন অভিনেতা, নাট্যকর্মী, সংগীত শিল্পীরা। We want justice স্লোগানে মুখরিত কলকাতার রাজপথ। এরপর আরজি কর কান্ডে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ প্রধান বিচারপতির এজলাসে ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা। সিবিআই তদন্তের আদেশ হয়। পরিস্থিতি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে কার্যত তুলোধোনা হয় রাজ্য। প্রধান বিচারপতির এজলাসে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ। প্রশ্নের মুখে পড়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অধ্যক্ষের ভূমিকাও।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল, আরজি কর নিয়ে আন্দোলন অনেকটাই কলকাতা শহর ও মফঃস্বল কেন্দ্রীক শহুরে আন্দোলন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এবার অনেকটাই টলমল। ঝাড়গ্রামের গ্রামীণ এলাকা লালগড়েও এবার তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে পথে নামলেন মহিলারা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবারের সন্ধ্যার মিছিলে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে প্রতিবাদ। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সুবিচারের দাবিতে ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে শহর-মফঃস্বলের সঙ্গে একই সুরে বাঁধা পড়ছে গ্রামও।