Train Accident: রেলযাত্রীদের নিরাপত্তায় কী ব্যর্থ রেলমন্ত্রক! ফাঁপা প্রতিশ্রুতির ডঙ্কা আর কতদিন

Published On:

একের পর এক রেল দুর্ঘটনা (Train Accident)! বারবার প্রকাশ্যে রেলের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা! এই ক্রমবর্ধমান রেল দুর্ঘটনায় (Train Accident) প্রশ্ন উঠছে, তবে কি রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ রেলমন্ত্রক? একাধিকবার রেলমন্ত্রক সামলানো প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো রেল দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের উদাসীনতা নিয়েও। সরব হয়েছেন অন্যান্য বিরোধী নেতানেত্রীরাও। এমনকি কিছুদিন আগেই এই প্রসঙ্গে লোকসভায় নিজের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! রেল আছে রেলের জায়গাতেই! দুর্ঘটনার বিরাম নেই! যাত্রী সুরক্ষার প্রশ্নটিও তথৈবচ!

ঘটনা ১- মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেস। মৃতের সংখ্যা আপাতত ২, আহত ২০ জনের বেশি।
ঘটনা ২- গত ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় চণ্ডীগড় থেকে ডিব্রুগড়গামী ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের অন্তত ১০-১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দু’জনের মৃত্যু হয়।
ঘটনা ৩- গত ১৭ জুন উত্তরবঙ্গের চটেরহাট এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। একই লাইনে পিছন থেকে এসে ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয় মালগাড়ি। কাঞ্চনজঙ্ঘার গার্ড এবং মালগাড়ির চালক-সহ মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৫০ জন।
ঘটনা ৪- ২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একটি মালগাড়িকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি। লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে এসে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় অন্য লাইন দিয়ে হাওড়ার দিকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন শত শত যাত্রী।

একের পর এক উল্লিখিত ঘটনাগুলি ছাড়াও লোকাল ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রেলের নিরাপত্তা নিয়ে৷ অভিযোগ উঠেছে, রেল মন্ত্রক দীর্ঘদিন নিয়োগ করেনি। গার্ড থেকে লোকো পাইলট সব পদেই পর্যাপ্ত কর্মী অমিল। সম্প্রতি রেলের তরফে প্রায় ৮ হাজার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ ফাঁকা পদের তুলনায় তা অপর্যাপ্ত এইকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে, রেলের নিরাপত্তাকে যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বারবার এই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ক’দিন আগেই সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, সারা দেশ জুড়ে রেল দুর্ঘটনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ চালু করা হচ্ছে। এমনকি আরও উন্নত ‘কবচ ৪.০’ কেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, সেই ‘কবচ’ ব্যবস্থা ইতিমধ্যে ৬৮ হাজার কিমি রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে ১৪৬৫ কিমি পথে চালু হয়ে গিয়েছে। সাউথ সেন্ট্রাল রেলওয়ের ১৪৪ লোকোমোটিভেও তা কাজ করছে। কিন্তু তারপরেও একের পর এক রেল দুর্ঘটনা কেন তা নিয়ে উত্তাল হচ্ছে বিতর্ক।

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ উঠেছিল, রেলের কর্মী অপ্রতুল। লোকো পাইলটদের নির্দিষ্ট সময়ের বিশ্রাম না দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। যদিও রেলের তরফে এই অভিযোগ খন্ডন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রেলের সেফটির চিফ কমিশনার৷ নিজের প্রাথমিক রিপোর্টে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, “স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং সেই সময় ট্রেন পরিচালনার একাধিক স্তরে ত্রুটি।” একই সঙ্গে লোকো পাইলট ও ট্রেন ম্যানেজারের কাছে ওয়াকিটকির মতো অত্যাবশ্যক সেফটি ইকুইপমেন্টের অনুপস্থিতিও উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু সেক্ষেত্রে কবচের মতো দুর্ঘটনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা কার্যকর হল না কেন প্রশ্ন সেটাই।

পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম সংস্থাগুলির একটি ভারতীয় রেল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বরাবর রেলের জন্য আলাদা বাজেট পেশ হয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর প্রথমবার স্বাধীন ভারতে রেল বাজেট পেশ হয়। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে সেই পৃথক রেল বাজেটের ইতি ঘটে। ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষ থেকে আর পৃথক রেল বাজেট পেশ হয়নি। সম্প্রতি ২৩ জুলাই এই আর্থিক বছরের ইউনিয়ন বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে রেলের জন্য ২ লক্ষ ৪০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে তা ৫% বৃদ্ধি করে ২ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। বরাদ্দের ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হবে রেলের সুরক্ষায়। সেই টাকা পুরাতন রেললাইন উন্নত করতে, সিগন্যাল ব্যবস্থা উন্নত করতে, ‘কবচ’ ব্যবস্থা কার্যকরী করতে ব্যবহার করা হবে৷ কিন্তু বারংবার রেল দুর্ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, কবচ ব্যবস্থা আদৌ কতটা উপযোগী!

এই ‘কবচ’ সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের ইঞ্জিন, সিগন্যাল ব্যবস্থা ও রেললাইনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইস লাগানো হয়। এর ফলে কোনও ট্রেন নির্ধারিত গতিবেগ অতিক্রম করলে এবং কোনও কারণে ড্রাইভার তা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে, ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় ব্রেক কাজ শুরু করবে। এখন প্রশ্ন হল, একাধিক ট্রেনের দুর্ঘটনার সময় ‘কবচ’ প্রতিরোধী ব্যবস্থা কতটা কাজ করেছিল? কাজ করে থাকলে তা দুর্ঘটনা আটকাতে ব্যর্থ হল কেন? বাজেট আসে বাজেট যায়, দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ স্মৃতিও প্রশমিত হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ রেলযাত্রীদের জীবনের সুরক্ষা সেই তিমিরেই থেকে যায়, আর শুধু ক্ষতিপূরণের ঘোষণাতেই জীবনের ‘মূল্য’ নির্ধারিত হয়ে যায়।