রাজীব ঘোষ: ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার সেই নির্দেশের পরেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সমস্ত ফুটপাত থেকেই পুলিশ প্রশাসন হকার উচ্ছেদ শুরু করে দেয়। এমনকি বুলডোজার চালিয়ে সমস্ত দোকান পাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেরকমই মেদিনীপুর(Midnapore ) শহরে মেদিনীপুর কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন এলাকায় যে সমস্ত হকাররা ছিলেন, তাদেরকে সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয়। তবে মেদিনীপুর(Midnapore ) প্রশাসনের তরফে সেই সমস্ত হকারদের অন্য একটি জায়গায় ব্যবসা করার জন্য পুনর্বাসন দেওয়া হয়।
এবার যেখানে প্রশাসনের তরফে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাদের ব্যবসা এতটুকু হচ্ছে না, এই অভিযোগে হকাররা পুনরায় মেদিনীপুর(Midnapore ) কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন এলাকায় ফিরে আসেন। অর্থাৎ যে জায়গায় আগে তারা হকারি বা দোকান নিয়ে ব্যবসা করতেন, সেই জায়গায় ফিরে আসেন। কিন্তু কেন তারা সরকারি পুনর্বাসন দেওয়া জায়গা বাদ দিয়ে পুরনো জায়গায় ফিরে এলেন? এই প্রশ্নের জবাবে গোষ্ঠ প্রামাণিক নামে একজন হকার বলেন, এসডিও ম্যাডাম, মেদিনীপুর(Midnapore ) পুরসভার চেয়ারম্যান সহ প্রশাসন আমাদের এখান থেকে সরিয়ে যে জায়গায় পুনর্বাসন দিয়েছিল, সেখানে একটুও কেনাবেচা হয় না। একটা সাইকেল দাঁড়াতে পারে না। আজ ১৩ দিন হয়ে গেল আমার দোকানে এক টাকারও কেনাবেচা নেই। অন্যান্য দোকানগুলিরও একই অবস্থা। ১০ টাকা বিক্রি হয় না। সারা দিনে কোনো মানুষ বা ক্রেতা সেখানে যায় না। ফলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুরনো এই জায়গাতেই ফিরে আসবো। ওই হকার আরো অভিযোগ করে বলেন, আজ যদি আমরা এখানে না আসি তাহলে আমাদের পরিবার কি খাবে? কিভাবে আমরা বেঁচে থাকব? এখানে দোকান করতে দিতে হবে।
মেদিনীপুর(Midnapore ) কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন ওই জায়গায় হকাররা ফিরে আসতেই মেদিনীপুর কলেজের অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী এবং পাশের মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা পথে নেমে আসেন। তারা প্রতিবাদ করতে থাকেন। এই বিষয়ে মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সত্যরঞ্জন ঘোষ জানান, এসডিও ম্যাডাম, ডিএম এবং চেয়ারম্যান এর উদ্যোগে এই জায়গা থেকে হকারদের দোকান তুলে দেওয়া হয়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও তারা এখানে এসে ফের ব্যবসা করার জন্য দোকান পাততে শুরু করেছে। যার ফলে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এই কারণেই আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এই জায়গায় এভাবে দোকান দিলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। তবে তারা যে পথ অবরোধ করেননি সেই বিষয়টিও জানিয়ে দেন। পাশাপাশি, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, পুনর্বাসন দেওয়া জায়গায় হকাররা চলে যাওয়ার ফলে হয়তো ওদের কোনো স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। কিন্তু সেই বিষয়টি আলোচনা করার প্রয়োজন। আমরা কেউই চাই না যে ওদের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাক। ওরাও ভালোভাবে বেঁচে থাকুক। আর আমাদেরও যেন সমস্যা না হয়। তাই দুই দিকেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ গুগল সিইও সুন্দর পিচাইকে সম্মান প্রদান গর্বের বিষয়, সান ফ্রান্সিসকোতে ঘোষণা আইআইটির
মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ওই জায়গায় এসে পুনরায় হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু হকাররা সেই কথা না শুনে সরাসরি মেদিনীপুর কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন রাস্তার উপরেই শুয়ে পড়েন। তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে শুয়ে পড়েন। তাদের একটাই দাবি, কোনোভাবেই ওই জায়গায় ব্যবসা হচ্ছে না। আমরা খেতে পারছি না। পরিবার নিয়ে বাঁচবো কি করে? আমাদের এখানেই ব্যবসা করতে দিতে হবে। আর এই দাবিতে রাস্তায় শুয়ে তারা অবরোধ করে ফেলেন। হকারদের দাবি, বারবার চেয়ারম্যান, এসডিও ম্যাডামের কাছে এই বিষয়ে হাতে-পায়ে ধরে আবেদন জানিয়েছি, তারা বলেছেন যে বিষয়টি নিয়ে দেখবেন। তবে এই ঘটনায় মেদিনীপুর কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন এলাকায় উত্তেজনায় ছড়িয়ে পড়ে।