রাজীব ঘোষ: টিউশন পড়াতে গিয়ে গৃহশিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর সেই সম্পর্কের পরিণতি যে এরকম জায়গায় পৌঁছতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করা যায় না। নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার কথা জানা গেলে পেশায় গৃহশিক্ষক শেখ হোসেন আলীকে নাবালিকা অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকেই মেদিনীপুর(Medinipur) সেন্ট্রাল জেলে বন্দী ছিলেন ওই গৃহশিক্ষক। গত ৫ই জুলাই মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকেই ধৃত গৃহ শিক্ষক শেখ হোসেন আলীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৬ ই জুলাই মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, পরিবারের কোনো সদস্যের অনুপস্থিতিতেই এই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলে বছর ২৫ এর শেখ হোসেন আলীর মৃতদেহ নিতে এসে ভয়ংকর ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা হাসনা বেগম। আর্তনাদ করে বলতে থাকেন, আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। যারা তাকে খুন করেছে, সেই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই। বছর ২৫ এর শেখ হোসেন আলীর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অধীনে দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকায়। তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাই দেহ তারা নিতে চাননি বলে জানা যায়। উল্টে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে সমস্ত পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পরে বিচারাধীন বন্দীর ওই মৃত্যুর ঘটনায় সম্পূর্ণ রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল এবং তমলুক থানা, তমলুক সংশোধনাগারের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৫ই জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের দক্ষিণ বাগুয়ান এলাকার বাসিন্দা শেখ হোসেন আলী পেশায় গৃহ শিক্ষকতা করেন। নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে মেয়েটির বাড়ি থেকে প্রতিবাদ করা হয় এবং মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আর তারপরেই জানা যায়, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ১৪ বছরের ওই নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হোসেন হিমাচল প্রদেশে চলে যান বলে অভিযোগ। তারপরেই মেয়েটির বাড়ির পরিবারের তরফে হোসেনের বিরুদ্ধে নাবালিকা হেনস্থা এবং অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। গত ২৭ জুন হিমাচল প্রদেশের সোলান জেলা থেকে পুলিশ হোসেনকে গ্রেফতার করে। তারপর ৭ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে তমলুকে নিয়ে আসা হয়। তমলুক আদালতে ১ জুলাই পেশ করা হলে ১২ই জুলাই পর্যন্ত জেল কাস্টডির নির্দেশ দেন বিচারপতি। আর নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে পাঠানো হয় একটি সরকারি হোমে।
আরও পড়ুনঃ ঘুষের টোপ দিচ্ছে বিজেপির কল্যাণ চৌবে, কুণালের দাবি ঘিরে নির্বাচনী ময়দান জমজমাট
এরপরেই শেখ হোসেন এর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, তমলুক উপসংশোধনাগারে ৩ জুলাই পর্যন্ত তাকে রাখা হয়। পরিবারকে কোনো কিছু না জানিয়ে ৪ জুলাই মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর ৫ জুলাই সকালে সেন্ট্রাল জেলের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত হোসেনের মায়ের অভিযোগ, তার ছেলেকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই খুনের পিছনে ওই নাবালিকা ছাত্রীর পরিবারের আত্মীয়দের হাত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। যদিও পুলিশ দাবি করেছে ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন।
এরপর মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর শহরে ছেলের দেহ নিতে পৌঁছে যান মৃত হোসেন আলীর পরিবারের সদস্যরা। ১০টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানায় যান তারা। তারপরে সেখান থেকে বেলা দুটোর সময় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন। মৃতের মা হাসনা বিবি মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আর্তনাদ করে দাবি করতে থাকেন, আমার ছেলে শিক্ষিত। টিউশন করত। ভালো কম্পিউটার জানতো। মেয়েটির সঙ্গে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। মেয়েটির বাড়ির লোক এই কথা জেনেই মেয়েটির উপর অত্যাচার শুরু করে। মেয়েটির চাপেই আমার ছেলে ওকে নিয়ে চলে যায়। তারপর জানতে পারি হিমাচল প্রদেশে গেছে। সেখান থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসার পর তার উপরে নির্মম অত্যাচার করে। আমার ছেলে কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে খুন করা হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সকলের কঠোর শাস্তি চাই। তমলুক জেল কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে, আদালতের অনুমতি নিয়েই শারীরিক অসুস্থতার জন্যই যুবককে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়।