নিসর্গ নির্যাস মাহাতো: ‘আই কল মাই সেলফ অ্যান এক্সপ্লোরার’, ‘কলকাতা মানে হচ্ছে সিটি অফ কালচার, সিটি অফ হেরিটেজ অ্যান্ড সিটি অফ সারপ্রাইজেস’- মনে পড়ছে প্রাক্তন ফিল্মের সেই বিখ্যাত ডায়লগ? এবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় থাকবে গাইড। তবে শুধু গাইড বললে কম বলা হবে, যিনি বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে লোকসাহিত্যের গল্প তুলে ধরবেন গল্পের ছলে তাঁকেই নির্বাচন করবে জেলা প্রশাসন।
পর্যটন কেন্দ্রের ওপরে জোর দিতে চলেছে কেন্দ্র সরকার। প্রকল্পের নাম- ন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যাসেটস্ ব্যাঙ্ক। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের তরফে দেশের সমস্ত রাজ্যে চিঠি পাঠানো হয়ে গিয়েছে। বঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি তালিকায় আছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। শুধু পর্যটন নয়, বিশেষ নজর থাকছে লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে। সূত্রের খবর, থাকবে ‘কথক’।
তথ্য ভাণ্ডারে উল্লেখ থাকবে জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের খুঁটিনাটি। দর্শনীয় স্থানগুলির ছবি, ভিডিও, তথ্য তুলে ধরা হবে ‘ইনক্রেডবল ইন্ডিয়া’ সহ বিভিন্ন পোর্টাল ও সাইটে। বিশেষ নজর দেওয়া হতে পারে বিজ্ঞাপনী প্রচারে। তবে বাড়তি গুরুত্ব পাবে সেই সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলি যেগুলি লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর।
আরও পড়ুনঃচলচ্চিত্রে বেলিয়াবেড়া প্রহরাজ বাড়ি, হচ্ছে মিউজিয়াম
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র একই সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থান। রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক কাহিনী। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গা অতীতকালে ছিল লোকসাহিত্যের আঁতুড়ঘর। সরকার চাইছে, এই লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে জোর দিতে।
দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ভ্রমণে আসেন বঙ্গে। সাহিত্য ও ইতিহাস প্রিয় মানুষদের বিশেষ নজর থাকে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসন কর্ণগড়, পাথরা, গড়বেতা, নাড়াজল সহ প্রায় ৭/৮টি জায়গা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করে ফেলেছে। এই সমস্ত জায়গায় থাকতে পারে বিশেষ ‘সেন্টার’। সেখান থেকে পাওয়া যাবে যাবতীয় তথ্য। শুধু তাই নয় থাকবে গাইড। তবে সেই গাইডের ভূমিকা হবে অনেকটা গল্পের ছলে তথ্য তুলে ধরা কথকের মত। ক্রাইটেরিয়া হিসেবে জেলা প্রশাসনের অবশ্যই নজর থাকবে ওই ব্যক্তিগণ নির্দিষ্ট এলাকার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহল কিনা তা নিয়ে। এভাবেই তুলে ধরা হবে শিবায়ন, মঙ্গলকাব্যের মতো সাহিত্যের গল্প কথা। উঠে আসবে আঞ্চলিক ইতিহাস। তুলে ধরা হবে স্থানীয় সংস্কৃতি ও শিল্পের কথাও।
উল্লেখ্য, ২০২২ সাল থেকে রাজ্য উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে গাইড ও হোম স্টে চালু করার। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের কর্ণগড়ের বিভিন্ন গেস্ট হাউসগুলির অবস্থা বেহাল। এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থাও বেহাল।
রাজ্য প্রায় দেড় বছর আগে উদ্যোগ নিয়েছিল বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ১৫-২০টি স্টল ও কিয়স্ক তৈরির। দায়িত্ব ছিল পর্যটন ও ক্ষুদ্র, মাঝারি, কুটির শিল্প দফতরের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কর্ণগড় থেকে দাবি উঠেছিল, এই অঞ্চলেও স্টল বা কিয়স্ক করার।
মনে করা হচ্ছে চলতি বছরে খুব শীঘ্রই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সমস্ত প্রকল্পই বাস্তবায়িত করে ফেলবে। সেই সঙ্গে বিশেষ জোর দেবে বেহাল হয়ে পড়া বিভিন্ন পর্যটন ও ঐতিহাসিক কেন্দ্রের সংস্কার সাধনে। ঐতিহাসিক সৌধগুলির সংস্কার করা হবে দ্রুত গতিতে।
কয়েক মাস পর শোনা যেতেই পারে ‘লোকে বলে প্যারিস ভালোবাসার শহর আর আমি বলি কলকাতা প্যাশনের শহর’। থুড়ি, কলকাতার বদলে শোনা যাবে নিজের জেলা, শহর-গ্রাম বা এলাকার নাম। আর ‘প্যাশন’ শব্দের বদলে শোনা যেতে পারে অন্য কিছু…