Hula Party: ভরসার নাম হুলা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে মধ্যপ্রদেশ

Published On:
লেটেস্ট আপডেট সবার আগে Join Now

ওরা হুলা পার্টি (Hula Party)! ওদের জন্যই জঙ্গলমহলের (Jangalmahal) মানুষজন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা জানে, বাপি, কেষ্ট, আকাশরা আছে। এবার আর অকালে ঝরে যাবে না জমির ধান, বেঁচে যাবে মাথার উপরের ছাদটুকু। জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য ওরা মাইলের পর মাইল হেঁটে যায় অক্লেশে, বাজি রাখে নিজের জীবনের। এদের কেউ হয়তো চাষ আবাদ করে, আবার কারও দিন গুজরানের ভরসাস্থল অন্যের জমি। দিন আনা দিন খাওয়ায় সংসার বাপি, আকাশদের। সংসারসীমান্তে রোজকার লড়াইয়ের পরে প্রায় রোজরাতে ওরা হাতে মশাল নিয়ে ছুটে বেড়ায় এদিক-সেদিক। দুরন্ত, দামাল বুনো হাতিদের তাড়াতে ওদের জুড়ি মেলা ভার। যখন বন দফতরের বাবুরা ভাতঘুম দিতে ব্যস্ত, সেইসময় হয়তো বাপি, আকাশরা হাতির পণ করে বসেছে কারও জমির ধান রক্ষার, অথবা মাথার ছাদটুকু বাঁচানোর। এবার এইসব যুবকরাই বাংলা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ। উদ্দেশ্য সেই একটাই, বাঁচাতে হবে সাধারণ মানুষের ঘর, বাঁচাতে হবে মানুষের জীবন।

বাপি, আকাশদের মতো যুবকরা বন বিভাগেরও বড় ভরসা। স্থানীয়ভাবে এরা পরিচিত হুলা পার্টির সদস্য হিসেবে। যখনই বুনো হাতির দল নেমে আসে লোকালয়ে তখনই ডাক পড়ে এদের। এতদিন মেদিনীপুর, বাঁকুড়া অথবা বর্ধমানের কিছু অঞ্চলে দেখা মিলত এদের। দিন হোক বা রাত, হাতির দাপাদাপির খবর পেলেই হাজির হয় এই হুলা পার্টি। এইসব যুবকরা যে বনবিভাগ থেকে খুব বেশিকিছু মজুরি পায় এমন নয়, অথচ ঘরে নিত্য অভাব – অনটনকে সঙ্গী করেও এক অদ্ভুত প্রাণশক্তি নিয়ে লড়ে চলে এরা। এবার ভিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ থেকে ডাক এসেছে ওদের। মধ্যপ্রদেশের অনুপপুর বনবিভাগের অন্তর্গত কিছু এলাকায় কিছুদিন ধরেই হামলা চালাচ্ছে একটি হাতির দল। হাতির রোষের মুখে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ফসল, বেশকিছু মানুষ আবার অতর্কিতে হাতির সামনে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সুতরাং, এখন ভরসার বাপি, আকাশরা।

এর আগে কর্নাটকের হুলা পার্টি ব্যর্থ হয়ে ফিরেছে মধ্যপ্রদেশ থেকে। তারপরেই অনুপপুর বনবিভাগের তরফে যোগাযোগ করা হয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হুলা পার্টির সঙ্গে। সেইমতো বাপি, আকাশরা তাদের সহযোদ্ধাদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ। যাতায়াতের সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে অনুপপুর বনবিভাগ এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফে। হুলা পার্টির সদস্য, বাপি মাহাত বলেন, ‘ এমন একটি জায়গায় হাতির দলটি রয়েছে যার চারদিক ফাঁকা, ফলে হাতির দলটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া একটু হলেও কঠিন। আপাতত আমরা গোটা এলাকাটা ঘুরে দেখেছি। কাল – পরশুর মধ্যে হাতির দলটিকে ছত্তিশড়ের দিকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।’

এখন অনুপপুরের ভাগ্য আকাশদের হাতে। জঙ্গলমহলের মতো হাতি অধ্যুষিত এলাকায় যে দস্যি – দামাল যুবকের দল এতদিন ধরে ভরসা জুগিয়েছে আট থেকে আশিকে, যাদের জন্য বেঁচে গিয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের সোনারঙা ধান অথবা মেটে বাড়ির ছাদ সেই যুবকরা নিশ্চয় ভরসা দেবে অনুপপুরের আম- আদমিকেও।