স্বপ্নীল মজুমদার: নারী পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ সহ একাধিক অভিযোগের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত এক মহিলা সহ চারজন আসামীকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বিশেষ পকসো আদালত। সোমবার ওই আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণা করেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট এক নাবালিকার মা ঝাড়গ্রাম থানায় তাঁর মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্ত নেমে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক সিংহ ওরফে লাদেন এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়া থানার অন্তর্গত বাসিন্দা অজয় দাসকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুনঃ পুলিশ লক- আপে হুইল চেয়ারে বসানো ছেলের মৃতদেহ, বুঝতেই পারলেন না মা – বাবা!
এরপরই নারী পাচার চক্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহার নেতৃত্বে গঠিত হয় বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’। লালগড় থানা এলাকার বাসিন্দা বাবর বেগ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা পিংকি বিশাললের খোঁজ শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালিকাদের প্রেমের জালে ফাঁসানো হতো। তারপর নাবালিকাদের ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় নামানো হতো। কেউ রাজি না হলে তার উপর চলতো অকথ্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার।
নাবালিকাদের খাওয়ানো হতো মাদক। গত বছর ১৭ অক্টোবর পিঙ্কিকে ফেরার দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। গত বছর ২৯ নভেম্বর পুরুলিয়ার বলরামপুর এলাকা থেকে পিঙ্কিকে পাকড়াও করা হয়। আদালতে ফের অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। চার্জশিটে যুক্ত করা হয় নারী পাচার, ধর্ষণ, পকসো আইনের ৪ ও ৬ নম্বর ধারা সহ একাধিক ধারা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মামলার বিচার শুরু হয়। ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার কৌশিক সিংহ ওরফে লাদেন, অজয় দাস, বাবর বেগ, এবং পিংকি বিশালকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সোমবার চার আসামীকে ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জানান, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর মাত্র ১০ মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। নারী পাচারের ঘটনায় এত তাড়াতাড়ি সাজা ঘোষণা আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কোথাও তার নজির নেই।