দেবব্রত মণ্ডল: আগামীকাল গোটা দেশে ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচন। তার আগে প্রশ্নের মুখে বাংলার পুলিশ – প্রশাসনের ভূমিকা। কয়েকদিন আগেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপিকে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুরুলিয়া জেলার পুলিশ সুপারকেও। এখানেই শেষ নয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনভাবেই যুক্ত থাকতে পারবেন না। লোকসভা ভোটের মাঝেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu) থেকে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সকলেই পুলিশ – প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি পঞ্চম দফার ভোটের মাঝেই এক তৃণমূল প্রার্থীও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই পরিস্থিতিতে ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে আরও কড়া অবস্থান নিল নির্বাচন কমিশন। ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৯১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, এরপরেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। ভোট – হিংসাকে রুখতে তাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সেই কারণেই গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোতায়েন করা হচ্ছে মাত্র ৭১৪ জন পুলিশকে। অর্থাৎ ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে আইন – শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিশনের ভরসা সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী।
আরও পড়ুনঃ দাঙ্গার রাজনীতি ও ভোট
গত দুদিন ধরে জ্বলছে নন্দীগ্রাম। সেখানে ভোট হিংসার বলি হয়েছেন এক বিজেপি কর্মীর মা। নিহতের পরিবারের অভিযোগের তির তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। বুধবার রাতে নন্দীগ্রামে খুন হন বিজেপি কর্মী সঞ্জয় আড়ির মা রথীবালা আড়ি। গুরুতর জখম সঞ্জয়, সূত্রের খবর তিনি কোমায় আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা অতি সঙ্কটজনক। এই ঘটনার পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন, ভাঙচুর চালানো হয় বেশকিছু দোকানে। এসবের মধ্যেই বিরোধী দলনেতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন। তার বক্তব্য ‘খুনি নন্দীগ্রাম থানার আইসির সঙ্গে মিটিং করেছে।’ থানায় ঢুকে পুলিশকে ধমক দিতেও দেখা যায় শুভেন্দুকে। তার দাবি পুলিশ প্রথমে তাকে খুনের অভিযোগের এফআইআর নম্বর দিতে চায়নি। বেশ কিছুক্ষণ বাগ – বিতণ্ডার পরে এফআইআর নম্বর দেয় পুলিশ। অভিযোগ ওঠে নন্দীগ্রামে খুনের ঘটনার পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে থানায় বসিয়ে রেখেছিল পুলিশ। তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এরমধ্যে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নন্দীগ্রামে এলে তাদের শুনতে হয় গো -ব্যাক স্লোগান। নন্দীগ্রামে এই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশনও। তারপরেই কমিশনের সিদ্ধান্ত গোটা মেদিনীপুর জেলায় মোতায়েন করা হবে মাত্র ৭১৪ জন পুলিশকে। প্রসঙ্গত, কাঁথি এবং তমলুক মিলিয়ে বুথের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। সুতরাং অনেক বুথেই থাকবে না রাজ্য পুলিশ।কমিশনের এই সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, তারা রাজ্যের পুলিশ – প্রশাসনের উপর ভরসা রাখতে পারছে না।
তৃণমূল অবশ্য কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপিকে সরিয়ে দেওয়ায় তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন – ‘এটাই মোদির গ্যারান্টি।’ এবার তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেছেন – ‘তমলুকে অবাধে ভোট লুঠ করতে চাইছে বিজেপি। সেই কারণেই রাজ্য পুলিশকে রাখা হচ্ছে না।’ তৃণমূলের অভিযোগ, নন্দীগ্রামে ৮০ টি বুথে কারচুপি করতে চাইছে বিজেপি।