বিক্রম ব্যানার্জী: ‘বামন হয়ে চাঁদ ধরার ইচ্ছা!’ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিকে নিয়ে মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে এমনই সব নানান রূপকথায় মোড়া প্রবাদ-গল্প। প্রতি মুহূর্তে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চাঁদের দিকেই আঙুল ওঠে আম জনতার। কিন্তু যাঁকে নিয়ে পৃথিবীবাসীর এত আলোচনা, সেই উপগ্রহটির সঠিক বয়স(Moon Age) কত তা জানা নেই কারোরই। সূর্যের আলোতে আলোকিত উপগ্রহটির বয়স নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। অবশেষে বছরের শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে এলো সুখবর। জানা যাচ্ছে, চাঁদের বয়স নিয়ে গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে গবেষকদের।
চাঁদের বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যেদিকে নজর দেওয়া উচিত সেটি হলো এর সৃষ্টি। চাঁদ যখন তার বর্তমান রূপ পায়নি ঠিক সেই সময়ে মঙ্গলের মতো কোনও এক আদি গ্রহের সাথে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। আর সেই পথ ধরেই জন্ম হয় চাঁদের। তবে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের জন্ম লগ্ন প্রসঙ্গে যাবতীয় তথ্য থাকলেও বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না এর আসল বয়স। তাই সেই অজানাকে জানতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। চলেছিল দীর্ঘ গবেষণা। অবশেষে 2024 সালের ডিসেম্বরে জানা গেল চাঁদের বয়স। গবেষকদের তরফে চাঁদের পাথর নমুনা সংগ্রহ করে সেই সংঘর্ষের তারিখ অনুমান করা সম্ভব হয়েছে বলেই জানিয়েছে এক বিদেশি সংবাদ মাধ্যম।
চাঁদের পূর্ব গঠন অর্থাৎ পাথরের যাবতীয় নমুনা প্রাচীন ম্যাগমা মহাসাগর থেকে স্ফটিক হয়ে গেছে বলেই ধারণা করছে বিশেষজ্ঞ মহল। পৃথিবীর সাথে মঙ্গলসম গ্রহের তীব্র সংঘর্ষের পরই জন্ম হয়ে চাঁদের। এ বিষয়ে প্রায় সকলে অবগত থাকলেও মহাসাগরীয় ম্যাগমা যে আজও চাঁদের পৃষ্ঠে রয়ে গিয়েছে একথা বোধহয় বিজ্ঞানীরা ছাড়া আর কেউই জানতেন না। চাঁদের যাবতীয় নমুনা বিশ্লেষণ করার পরই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ অর্থাৎ চাঁদের বয়স আনুমানিক 435 কোটি বছরের কাছাকাছি। তবে এই ধারণায় দ্বিমত রয়েছে সম্প্রতিক এক গবেষণার।
বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদপত্র নেচারে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা ক্রুজ-এর এক অধ্যাপক এবং তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, চাঁদের বয়স বিজ্ঞানীদের অনুমানের থেকেও বেশি। তাঁদের বিজ্ঞানভিত্তিক মডেল বলছে, গরম এবং ঠান্ডা দুই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছিল চাঁদকে। যার কারণে চাঁদের পৃষ্ঠ ঠান্ডা হয়ে কঠিন হওয়ার পরই তা পুনরায় উত্তাপে গলে গিয়েছিল। যা থেকে বোঝা যায়, চাঁদের শিলা নমুনা গুলি বহু আগেকার। যা তাপ পেতেই পুনরায় গলে গিয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা ক্রুজের গবেষকরা দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, চাঁদের বয়স বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে 451 কোটি বছর। যা বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী হিসাব থেকে 16 বছর বেশি।